প্রতিনিয়তই নারীরা শিকার হচ্ছে যৌন নিপীড়ন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাসহ নৃশংস নির্যাতনের/ প্রতীকী ছবি

বর্তমানে বসত ঘর, রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহণসহ সব জায়গায়ই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, নারী ও শিশুর নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। নারী-শিশুর স্বাধীন চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়তই নারীরা যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাসহ নৃশংস নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নেশাজাত দ্রব্য খাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে এক কিশোরীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যা, কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক ধলঘাটপাড়ায় কিশোরীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসেত তুলে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়ে মহিলা পরিষদ এ বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর চার বন্ধু মিলে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। গুরুতর অসুস্থ হলে তারা শিক্ষার্থীকে আনোয়ার খান হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে গত ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টার দিকে শহীদ মিনারের পেছনে আবুল খায়ের এক কিশোরীকে ডেকে নিজে ধর্ষণ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। শাহবাগ থানা পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে বিবস্ত্র ও অচেতন অবস্থায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান।

গত ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক ধলঘাটপাড়া থেকে সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বান্ধবীর ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসে এক কিশোরী। বিকেল চারটার দিকে কিশোরী ধলঘাটপাড়ার একটি লন্ড্রির সামনে পৌঁছালে তিন দুর্বৃত্তরা তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে মাইক্রোবাসের মধ্যেই মুখ ও হাত-পা বেঁধে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরদিন রাতে সেখান থেকে তিন দুর্বৃত্ত ওই কিশোরীকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও কলেজ মাঠে এনে আবার দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। গত ৩০ জানুয়ারি ঈদগাঁও বাজারের একটি মার্কেটের দোতলায় কিশোরীকে আটকে রাখলে তার চিৎকার শুনে বাজারে টহলরত পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

এর আগে, ৩০ জানুয়ারি বিকেলে মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নে ভুক্তভোগী কিশোরী তার বাড়িতে একা ঘুমিয়েছিলো। মা ও ভাই বাড়িতে না থাকার সুযোগে একই গ্রামের জমির উদ্দিন কিশোরীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। কিশোরীকে চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা পরিষদ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানায়। পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করাসহ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়া যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ সাপেক্ষে দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায় সংগঠনটি।

জেইউ/এমএইচএস