করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি বা নবম শ্রেণির ফলাফল মূল্যায়নের ভিত্তিতে ‘অটোপাস’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়া মানববন্ধনে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশ নেন। এ সময় অটোপাসের দাবিতে তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার দেখা যায়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ফারহান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কারণ ২০২০ সাল পুরোটাই গেছে করোনার মধ্যে। এ সময়ে কোনো ক্লাস, প্র্যাকটিক্যালে অংশ নেওয়া হয়নি। অনলাইনে যে ক্লাস হয়েছে তাতেও সবাই অংশ নিতে পারেনি। এ কারণে পরীক্ষা নিলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হবে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ব্যাচটি পুরো দুই বছর ক্লাস, টেস্ট পরীক্ষাসহ সবদিক থেকেই প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আমরা পুরো এক বছর ক্লাসের বাইরে ছিলাম। তারপরও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

মানববন্ধনে সেশনজটের ঝামেলা এড়াতে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাস ঘোষণার এবং তা ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়ার দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আবিদুর রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষা নিয়ে মানসিক অশান্তিতে আছে। তাই তাদের এ অশান্তি দূর করতে বিকল্প পদ্ধতিতে আমাদের পিইসি এবং জেএসসির ফলাফল মূল্যায়ন করে অটোপাস দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, জুনে পরীক্ষা দেওয়ার আগে যদি আমি করোনা পজিটিভ হই, তাহলে আমি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারব না। করোনা পজিটিভ হলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তখন পরীক্ষা তো স্থগিত থাকবে না। তাহলে যে শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হবে তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে?

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের স্থান ঠায় নাই, জেগেছে জেগেছে শিক্ষার্থীরা জেগেছে, এক দফা এক দাবি অটো পাস কবে দিবে’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এর আগে জানুয়ারি মাসে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব ও কুড়িলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

এছাড়াও ‘২০২১ এসএসসি বাতিল চাই অফিসিয়াল’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকেও এসব দাবি জানানো হয়।

করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আয়োজন করা হয়নি ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও। পরে সরকার অটোপাস ঘোষণা করে। তাছাড়া বাতিল করা হয়েছিল জেএসসি, পিইসি ও সমমানের পরীক্ষাও। পরীক্ষা ছাড়াই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে এসব শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, ২৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবারের এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্যসূচি কাটছাঁট করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস করিয়ে জুন নাগাদ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আয়োজন করা হতে পারে। আর কাটছাঁট করা পাঠ্যসূচিতে থেকে আগামী বছরের মে পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ক্লাস করিয়ে জুনে এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

এনএম/এমএইচএস