উন্নত জীবন, বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি

প্রতি বছরই কর্মসংস্থান ও বাড়তি কিছু আয়ের আশায় দেশের এক অংশ মানুষ বিদেশে পাড়ি জমান। এদের মধ্যে অনেকেই দাপ্তরিক কাজের দেরির কারণে হারিয়ে ফেলেন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ। কেউ কেউ আবার পড়েন দালালের খপ্পরে। আর এতেই ভেঙে যায় বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন, হারিয়ে যায় জমানো সর্বস্ব।

এবার তাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিদেশগমন ইচ্ছুকদের সার্বিক প্রক্রিয়া অনলাইনের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। অনলাইনের মাধ্যমে দেশ বা বিদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রবাসীরা বহির্গমন ছাড়পত্রসহ অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশগমন ইচ্ছুকদের সার্বিক প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি কমাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অভিবাসীদের জন্য বিএমইটি’র বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অভিবাসীরা যেকোনো জায়গা থেকে ছাড়পত্র পেতে আবেদন করতে পারবেন। এর সঙ্গে প্রতারক বা দালালে দৌরাত্ম্য ও অবৈধ লেনদেন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এছাড়াও অভিবাসীদের হয়রানিও কমে যাবে।

বিএমইটির পক্ষ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে ‘অভিবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণে বিএমইটির সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জিওবি অর্থায়ন থেকে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন থেকে পরবর্তী তিন বছরে এর কাজ শেষ হবে। সম্প্রতি প্রস্তাবটির উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কার্যপত্রে বলা হয়, বিএমইটিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করা। এছাড়া উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বিএমইটির জনবলের অধীনস্থ সংগঠনের সক্ষমতা জোরদারকরণ, অফিস সরঞ্জাম, আসবাবপত্র সরবরাহের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ল্যাব ও আইটি সলিউশন উন্নয়ন, বিএমইটির প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি তলায় নতুনভাবে অভ্যন্তরীণ মেরামতসহ আধুনিকায়ন, বিদেশে চাকরি পাওয়ার সুযোগ সহজতর করে তথ্য প্রচারের সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বিএমইটির কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে অভিবাসন, শ্রম বাজার গবেষণা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এ প্রসঙ্গে বিএমিইটির মহাপরিচালক শামছুল আলম বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে অভিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা বা দালালে দৌরাত্ম্য ও অবৈধ লেনদেন কমে আসবে। এছাড়া অভিবাসীদের হয়রানিও কমবে।

তিনি বলেন, এখানে এক ধরনের ডাটাবেইজ থাকবে, যেখানে বিদেশ গমন ইচ্ছুকরা আবেদন করতে পারবেন ও বিদেশ থেকে কেউ শ্রমিক নিতে চাইলে আবেদনকারীদের বিষয়ে জানতে পারবেন। এতে বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের কোনো অসঙ্গতি থাকলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জবাব দিতে পারবেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা বলছেন, প্রকল্পটির জন্য কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। অথচ ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের কোনো প্রকল্প নিতে হলে সমীক্ষা করা জরুরি। এ বিষয়ে বিএমইটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হবে কম্পিউটার সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জাম ৪ কোটি টাকার ও ২ কোটি টাকায় আসবাবপত্র। এছাড়া বেশকিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায় গ্যাস ও জ্বালানি, লুব্রিকেন্ট ও গাড়ি মেরামত বাবদ বরাদ্দ চাওয়া হলে পরিকল্পনা কমিশন করোনার কারণে কৃচ্ছতাসাধনের নীতির কারণে তা বাতিল করে।

পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটি প্রথম ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। পরে সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হলে পুনর্গঠিত ডিপিপি আসতে ৮ মাস সময় পার হয়ে যায়। এরপর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় বেশকিছু বিষয় পরিবর্তনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আবারও প্রকল্প প্রস্তাবনা বা ডিপিপি পাঠানোর কথা বলা হয়। এরপর পিইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে ডিপিপি প্রস্তুত করতে ১ বছর সময় লেগে যায় বিএমইটির। ২০১৮ সালের আগস্টে অনুমোদনের জন্য সার সংক্ষেপ পরিকল্পনা মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হলে তাতে তিনি সায় দেননি। প্রকল্পটি পড়ে উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রবাসীদের জন্য প্রকল্পটি সহায়ক হবে। কারণ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য সব বিষয় অনলাইনের আওতায় চলে আসবে। যার কাজ, চাইলে সে নিজেই করতে পারবে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সে হিসেবে আমাদেরও প্রতিটি খাতে সেবা অনলাইনের আওতাভুক্ত করা হচ্ছে।

এসআর/এমএইচএস