মাটি, বালি ও নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী যানবাহন থেকে রাস্তায় প্রচুর বালি ও মাটি ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে রাস্তাগুলো ধূলিময় হয়ে পড়ে

বাংলাদেশের বাতাসে কোনো প্রকার টক্সিক (বিষাক্ত) উপাদানের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়নি। তাই এটিকে কোনোভাবেই বিষাক্ত বাতাস বলার অবকাশ নেই বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দাখিল করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিষয়টি শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মোতালিব স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাতাস অনেক ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। কিন্তু এটিকে কোনোভাবেই বিষাক্ত বাতাস বলার অবকাশ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে পলিমাটি দ্বারা গঠিত একটি বদ্বীপ। ভূপৃষ্ঠের পলিমাটি অতি সহজেই বায়ুতে ডাস্ট আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা ও ঢাকা শহরের বাহিরে অধিকাংশ জায়গা অনাবৃত থাকায় শুষ্ক মৌসুমে এ জায়গাগুলো থেকে ধূলিকণা বাতাসের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া রাস্তার পাশে ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনাবৃত স্থানের কাদামাটি থেকে প্রচুর ধুলাবালির সৃষ্টি হয়।

মাটি, বালি ও নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী যানবাহন থেকে রাস্তায় প্রচুর বালি ও মাটি ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে রাস্তাগুলো ধূলিময় হয়ে পড়ে। শীত মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম থাকায় কুয়াশার সাথে বাতাসে ভাসমান ধুলা-বালি মিশে ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি নেমে আসে এবং বাতাসের মানের অবনতি ঘটায়। বাতাসের গতি বৃদ্ধি এবং দিক পরিবর্তন না হলে এ অবস্থা দীর্ঘদিন বিরাজমান থাকে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ বায়ু সেবন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের উৎসের মধ্যে দুটি হলো অভ্যন্তরীণ ও ট্রান্সবাউন্ডারি উৎস। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আগত বায়ুদূষণ যুক্ত হলে দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। রান্নায় ব্যবহৃত বারোমাস পোড়ানো, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার চারপাশে কৃষি জমির নাড়া পোড়ানো, কৃষি জমি কর্ষণ ও চাষাবাদের ফলে সৃষ্ট নানা বিষয় ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

আদালত প্রতিবেদনটির ওপর শুনানি নিয়ে রাজধানীর বায়ু দূষণ রোধে নগরীর প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ  দিয়েছেন। একইসঙ্গে সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় উপর থেকে পানি ছিটাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে রাস্তার পাশের ছোটোখাটো গাছে জমে থাকা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার হয়। এছাড়া পানি ছিটানোর ক্ষেত্রে পানির ঘাটতি তৈরি হলে ঢাকার সিটি করপোরেশনকে পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আদালতের এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার বায়ুদূষণ রোধে গত বছর জানুয়ারিতে হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে ফেব্রুয়ারিতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলে বায়ু দূষণ কিছুটা কমে আসে।

শীতকালে বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ এমনিতেই বেড়ে যায়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত কয়েকমাস বায়ু দূষণ কম ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও দূষণ বেড়েছে। সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে, বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বে এক নম্বরে।

আইনজীবী বলেন, ওই ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন বলেছে পানি ছিটাতে গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে পানি ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকার বায়ু দূষণ বন্ধে আরও পাঁচ দফা নির্দেশনা চেয়ে বৃহস্পতিবার একটি সম্পূরক আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। তার মধ্যে তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ আইনজীবী।

এমএইচডি/এমএইচএস