পুরস্কারের আশায় কখনও কাজ করিনি : মাহফুজা খানম
মাহফুজা খানম - ফাইল ছবি
শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য এবার একুশে পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, নারীনেত্রী মাহফুজা খানম। মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা এই আলোকিত ব্যক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং একমাত্র নারী ভিপি। শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন তিনি।
একুশে পদক পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে একুশে পদক আমার কাছে অন্য রকম এক অনুভূতির নাম। সমাজে অবহেলিত মানুষ বিশেষ করে নারীদের জন্য কাজ করেছি সারাজীবন। রাষ্ট্রীয় এ পুরস্কারটি আমি এসব অবহেলিত মানুষকে উৎসর্গ করেছি।
বিজ্ঞাপন
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন সেবা করে যেতে পারি।
মাহফুজা খানম
সুযোগের অপেক্ষায় শিক্ষার আলো থেকে যারা বঞ্চিত তাদেরকে শিক্ষা আলো দিতে বাকি জীবন কাজ করে যাবেন বলে জানালেন এই শিক্ষা অনুরাগী। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ শুরু করেছি। আজ অবধি এটা করে যাচ্ছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন সেবা করে যেতে পারি, দেশবাসীর কাছে সেই দোয়া চাই।
বিজ্ঞাপন
একুশে পদকের খবরে আমি যাদের জন্য কাজ করি তারা খুব খুশি হয়েছেন।
মাহফুজা খানম
পুরস্কার পাওয়ার প্রসঙ্গে মাহফুজা খানম বলেন, সমাজসেবা করে পুরস্কার পাব এমন চিন্তায় কোনো কাজ করিনি। একুশে পদক আমার সারাজীবনের সব কাজের স্বীকৃতি। একুশে পদকের খবরে আমি যাদের জন্য কাজ করি তারা খুব খুশি হয়েছেন।
এক নজরে মাহফুজা খানম
ডাকসুর ইতিহাসে একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের জন্ম কলকাতায় ১৯৪৬ সালের ১৪ এপ্রিল। তিনি ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মনোনয়ন পেয়ে ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন।
১৯৬৮ সালে লন্ডন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পান তিনি। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তৎকালীন পাকিস্তানের মোনায়েম সরকার তাকে পাসপোর্ট দেননি। যার ফলে তার আর স্কলারশিপ গ্রহণ করার সুযোগ হয়নি।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের লেখাপড়ার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা এ নারী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। শিক্ষায় অবহেলিতদের পাশে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। বিশেষ করে নারীশিক্ষার ক্ষেত্র। শিক্ষার আর্থিক তহবিলের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৭টি শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন মাহফুজা খানম। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য তিনি। এছাড়াও তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সামাজিক সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতায় নিযুক্ত থাকা অধ্যাপক মাহফুজা খানম এখন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া খেলাঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সহধর্মিণী। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী। মাহফুজা খানম ২০১২ সালে নারী শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ‘বেগম রোকেয়া পদক’ লাভ করেন। তিনি ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট ‘অনন্যা শীর্ষ দশ ২০১৩’ পুরস্কার ও সম্মাননা পান। এছাড়াও বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আর টিভি থেকে ‘জয়া আলোকিত নারী-২০১৭’ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
একুশে পদক পাচ্ছেন যারা
গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রের এই সম্মানজনক পুরস্কার পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন যারা তারা হলেন- ভাষা আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোতাহার হোসেন তালুকদার (মরণোত্তর), শামছুল হক (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর), শিল্পকলায় বেগম পাপিয়া সরোয়ার (সংগীত), রাইসুল ইসলাম আসাদ (অভিনয়), সালমা বেগম সুজাতা (অভিনয়), আহমেদ ইকবাল হায়দার (নাটক), সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী (চলচ্চিত্র), ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যয় (আবৃত্তি), পাভেল রহমান (আলোকচিত্র)।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, গবেষণায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী, গোলাম মুরশিদ পদক পাচ্ছেন।
এনএম/এইচকে