ছবি : সংগৃহীত

তরুণ প্রজন্মের মন ও মননে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করতে যে ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহগুলো প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে তার মধ্যে রয়েছে ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল, ১৯৭১-এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে উল্লিখিত প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে অসাধারণ প্রেরণা জোগাবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ‘ব্রেনচাইল্ড’ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিয়ে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার থেকে আত্মমর্যাদাশীল বাঙালি জাতিরাষ্ট্র তথা সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করেন।

১৯৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে সমগ্র বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থান দেশপ্রেমের চেতনার শানিত ফসল। বলাবাহুল্য যে, এই জাগ্রত চেতনা এবং প্রেরণার প্রতিফলন ঘটে ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলে।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ফলাফলের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিষ্ঠিত হন অবিসংবাদিত এক নেতৃত্বে। আর এই স্বীকৃতিই বঙ্গবন্ধুকে করে তোলে আত্মমর্যাদাশীল বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা তথা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় একক নেতৃত্ব ও প্রেরণার উৎস হিসেবে।

তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা পূর্ববাংলার আপামর জনগণই তাদের মন-মননে বঙ্গবন্ধুকে একক নেতৃত্ব ও দেশপ্রেমের প্রেরণার উৎসে অধিষ্ঠিত করেন। সুতরাং আপামর জনগণের মন-মননে অধিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বও নির্দেশনা হয়ে উঠে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের সাথে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। কেননা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বাপর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন আপামর বাঙালির আত্মত্যাগ তথা নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমের চেতনা যা অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয়।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির যে আত্মত্যাগ, শোষণ, নির্যাতন, জেল-জুলম হুলিয়ায় আবর্তিত তার একটি অন্যতম উদাহরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন। প্রায় ১৩ বছরের বেশি জেলে বন্দি বঙ্গবন্ধু সকল নির্যাতন সহ্য করেছেন বাংলার মানুষের ভাগ্যন্নোয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায়।

আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে লক্ষ-লক্ষ নেতাকর্মী নির্যাতন, জুলম সহ্য করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ। তাদের ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে দেশপ্রেমের এ চেতনা। এই চেতনাকে ভিত্তি করে দলমত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন আপামর জনগণ। ব্যতিক্রম ছিল শুধু স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থী কতিপয় রাজনৈতিক দল ও কিছু মানুষ। যারা আলবদর, রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষাণটি ছিল মূলত স্বাধীনতা ঘোষণার ভাষণ। যেটা আমার বিশ্লেষণে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ঘোষণা’ আর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা হলো ‘প্রশাসনিক স্বাধীনতা ঘোষণা’।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি বাক্যে আপামর বাঙালিকে উদ্বুদ্ধকরণ, চেতনা জাগ্রতকরণ, প্রেরণাদান, সর্বোপরি নির্দেশনা দান করেন। বঙ্গবন্ধু তার ঐ ভাষণে জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন।

সর্বোপরি তার ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার তথা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা পূর্ববাংলার আপামর মানুষ অধীর আগ্রহে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে আপামর বাঙালির অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। শুরু হয় দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার প্রস্তুতি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে যার নাম বাংলাদেশ। আজকের ৫০ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির যে শক্তি তা হলো, আপামর বাঙালির দেশপ্রেম এর শক্তি।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে প্রেরণা তা হলো দেশপ্রেমের প্রেরণা, বাংলাদেশ পাওয়ার যে সংগ্রাম তা হলো আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়ার চেতনা, সর্বোপরি সঠিক সময়ে যথাযথ নির্দেশনায় সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা। যা উৎসারিত হয়েছে দেশপ্রেমের জাগরণে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে।

অতএব বর্তমান প্রজন্মকে আগামীর উন্নত বাংলাদেশ তথা আত্মমর্যাদাশীল বাঙালি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমের জাগরণে উদ্বুদ্ধ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেরণায়।

অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন ।। উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়