ছবি : সংগৃহীত

ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এদেশের যুব সমাজের হার না মানা লড়াকু মনোভব আর অটুট লক্ষ্য ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিল আমাদের কাঙ্ক্ষিত গর্বের স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গড়তেও হাল ধরেছিল যুব সমাজ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী কাঁধে তুলে নেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের গুরুদায়িত্ব। সেই থেকে শুরু, আজ অব্ধি দেশের ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে যুবলীগ।  

আফ্রো-এশীয় উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ছাত্র ও যুব সমাজই দেশ ও সমাজ অগ্রগতির পথিকৃৎ এবং ভবিষ্যতের রূপকার। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি তারা।

আরও পড়ুন : যুবলীগের যে ধরনের রাজনীতি করে 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত সব আন্দোলন ও সংগ্রামে যুবসমাজের নেতৃত্ব এনে দিয়েছে আকাশচুম্বী সফলতা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ; প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এদেশের যুব সমাজ।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একদিন শেখ মনিকে বলেন, ছাত্র জীবন পেরিয়েছে অথচ যৌবন পেরোয়নি এরকম বহু যুবক এখন আদর্শহীন, লক্ষ্যহীনভাব ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন অলস ও অকর্মণ্য জীবন কাটাচ্ছে, নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িত হচ্ছে। এদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে নিয়োজিত করতে পারলে একটি শক্তিশালী যুবসমাজ তৈরি হবে, যে শক্তির ভেতর থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। দেশ এবং সমাজের ভবিষ্যতের রূপকার এই যুবসমাজ।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী তার বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের ২৩৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনি ‘যুবলীগ’ গঠন করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই যুবলীগ একটি শক্তিশালী যুব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন : ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত : ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের ইতিহাস 

সত্য কথা বলতে কি, যুবলীগের শক্তি ও সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বের আমলে। গাফ্‌ফার চৌধুরী আরও বলেন, তার বড় ছেলে শেখ পরশ যদি পিতার সংগঠনের সাফল্য ও সুনামকে পুনরুদ্ধার করতে পারেন, তাহলে তার শহীদ পিতার আত্মা শান্তি পাবে।

রাজনৈতিক পরিবার, রাজনৈতিক পরিবেশে তার জন্ম। তিনি যুবলীগে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এরই ধারাবাহিকতায় মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত শ্রেণি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ করে, শিক্ষা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবকদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘাতকের বুলেট সেই প্রয়াসকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।    

১১ নভেম্বর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সংকটে-সংগ্রামে, মানবিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ থাকবে মানুষের পাশে।

দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত নিবেদিত প্রাণ যুবকদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে, বর্ধিত সভা করা হচ্ছে।

যারা দেশ এবং জনগণের কল্যাণে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ? 

করোনাকালীন সময়ে সংগঠন দেখিয়েছে মানবিকতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত। মরণব্যাধী কোভিডের ভয়াল থাবায় যখন দেশ একপ্রকার স্থবির, সকলে ঘরবন্দি, খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকট যখন চরমে তখন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এম্বুলেন্স সার্ভিস, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ, মেডিকেল সার্ভিস, রান্না করা খাবার বিতরণের মতো নিয়মিত কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বদা পাশে ছিল সাধারণ মানুষের। মুজিবের হৃদয় সর্বদা গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য ছিল খোলা। যুবলীগ পিতা মুজিবের সংগঠন হিসেবে সে যাত্রায় একেবারেরই সফল বর্তমান সফল চেয়ারম্যান মুজিব পরিবারের স্পর্ধিত রাজনৈতিক উত্তরসূরি শেখ ফজলে শামস পরশের সুযোগ্য নেতৃত্বে।

যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ। আগামীর যুবলীগও এভাবেই এগিয়ে যাবে। ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে যুবলীগের ৫০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে।

এদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সজাগ আছে। গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে বিএনপি-জামায়াতের হুমকি-ধমকি এবং অগ্নিসন্ত্রাস রুখতে যুবলীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সাংবিধানিক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবে যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে এর সাথে বিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির অপপ্রচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সেই পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হচ্ছে যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মী।

আরও পড়ুন : নূর হোসেন : আমাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মার প্রতিশব্দ 

জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে যুবলীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩০০ নৌকার প্রার্থী বিজয় করার লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ, সাফল্য জনগণের কাছে পৌঁছানো, বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলা সবকিছু নিয়ে যুবলীগ কৌশল, প্লান ও মাঠে কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর সেকেন্ড হোম রাজপথ। রাজপথে থেকেই ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করে ঘরে ফিরবে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ আগামীর বাংলাদেশ। সেই অগ্রযাত্রায় যুবলীগের অবস্থান থাকবে সর্বদা বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ডের ন্যায়। আমরা যুবসমাজ প্রত্যাশা করি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আবারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে সরকার গঠন করবে।

উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। জয় হোক বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

এন আই আহমেদ সৈকত ।। উপ-তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ