মশাবাহিত যে রোগগুলো প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় তার মধ্যে ডেঙ্গু অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। বছরে প্রায় বিশ্বের ১০০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে ২৫ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং বছরে প্রায় ১২,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, দেশের সব বিভাগেই কম-বেশি ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে প্রায় এক দশক আগেই। বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন অনুমোদিত হলেও, বাংলাদেশে এখনো এ ভ্যাকসিন অনুমোদিত নয়। এ লেখায় ডেঙ্গু ভ্যাকসিন, এর সুবিধা অসুবিধা ও বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এর উপযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবো।   

ডেঙ্গু কী?

ডেঙ্গু (Dengue) বা ডেঙ্গি একধরনের ভাইরাসঘটিত রোগ যা প্রধানত এডিস মশার দুটি প্রজাতি-Aedes aegypti and Aedes albopictus- এর মাধ্যমে মানুষে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু হলে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয় বলে একে প্রচলিত ভাষায় হাড় ভাঙা জ্বরও বলে।

ডেঙ্গুর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো হঠাৎ করে উচ্চ মাত্রার জ্বর আসা। সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশি ও হাড়ে ব্যথা হয়।

জ্বরের দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ত্বকে লালচে দাগ বা র‍্যাশ দেখা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নাক বা মাড়ি থেকে সামান্য রক্তপাতও হতে পারে। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়া একটি অন্যতম লক্ষণ যার মাধ্যমে চিকনগুনিয়া থেকে ডেঙ্গুকে পৃথক করা সহজ হয়।

ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ কয়টি?

যে ভাইরাস দিয়ে ডেঙ্গু হয় তাকে ডেঙ্গু ভাইরাস (ইংরেজিতে সংক্ষেপে DENV) বলা হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো- DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। এ চার প্রকারের ভাইরাসকে সেরোটাইপ বলা হয় কারণ এদের প্রত্যেকটির বিরুদ্ধে মানুষের শরীর আলাদা আলাদা ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ডেঙ্গুর সেরোটাইপগুলোর জিনোম লেভেলে একে ওপরের থেকে প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ পার্থক্য রয়েছে। এর ফলে ডেঙ্গু ভাইরাসের এনভেলপ প্রোটিনের গঠন আলাদা হয় এবং সংক্রমণের পর মানুষের শরীর ভিন্ন রকমের ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

এই চারটি সেরোটাইপের প্রত্যেকটি ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে এদের মধ্যে DENV-2 এবং DENV-3 সেরোটাইপের সংক্রমণ ক্ষমতা ও তীব্র রোগ তৈরি করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে DENV-2 সেরোটাইপের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর তৈরি করার ক্ষমতা বেশি।   

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুর দুটি ভয়ানক সেরোটাইপ- DENV-2 এবং DENV-3-এর ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে দেশে একেক বছর একেক সেরোটাইপ বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠে।

ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সেরোটাইপ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি সেরোটাইপ দিয়ে কেউ আক্রান্ত হলে সেই নির্দিষ্ট সেরোটাইপের বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, কিন্তু অন্য সেরোটাইপ দ্বারা পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং দ্বিতীয়বার অন্য সেরোটাইপ দিয়ে সংক্রমণ হলে মারাত্মক ডেঙ্গু (Severe Dengue) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তাই, কোনো এলাকায় এক বছর এক সেরোটাইপ এবং অন্য বছর অন্য সেরোটাইপ দিয়ে আক্রমণ বেশি হলে হাসপাতাল ভর্তির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়, কারণ মানুষের মধ্যে ওই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকে ইমিউনিটি কম থাকে। ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও সেরোটাইপের পার্থক্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

ডেঙ্গু ভ্যাকসিন কত প্রকার ও কী কী?

এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর তিনটি অনুমোদিত ভ্যাকসিন রয়েছে। এগুলো হলো ফ্রান্সের স্যানোফি পাস্তুরের তৈরি CYD-TDV যার বাণিজ্যিক নাম ডেংভ্যাক্সিয়া (Dengvaxia), জাপানের তাকেদার তৈরি কিউডেঙ্গা (Qdenga) যেটি TAK-003 নামেও পরিচিত এবং ব্রাজিলের বুটানটান ইন্সটিটিউটের তৈরি বুটানটান ডিভি (Butantan-DV)। এ তিনটি ভ্যাকসিনের একেকটির কার্যকারিতা, ডোজ ও নির্দেশনা আলাদা।

CYD-TDV বা ডেংভ্যাক্সিয়া

স্যানোফি পাস্তুরের তৈরি CYD-TDV বা ডেংভ্যাক্সিয়া বিশ্বের প্রথম ডেঙ্গু ভ্যাকসিন। ২০১৫ সালে ডেংভ্যাক্সিয়া প্রথম আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়। এটি এক ধরনের লাইভ-এটেনুয়েটেড কাইমেরিক টেট্রাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন। তিনটি ডোজে তিন মাস পর পর এটি দিতে হয়।

ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি সেরোটাইপ দিয়ে কেউ আক্রান্ত হলে সেই নির্দিষ্ট সেরোটাইপের বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, কিন্তু অন্য সেরোটাইপ দ্বারা পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং দ্বিতীয়বার অন্য সেরোটাইপ দিয়ে সংক্রমণ হলে মারাত্মক ডেঙ্গু (Severe Dengue) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এটিকে যাদের অন্তত একবার ডেঙ্গু সংক্রমণের ইতিহাস রয়েছে এমন ৬-১৬ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের এবং কিছু দেশ এটি ৪৫ বছর পর্যন্ত যে কাউকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

ডেংভ্যাক্সিয়া তৈরি করতে ইয়েলো ফিভার ভাইরাসকে মূল কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এর জিনোমে ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের এনভেলপ ও স্ট্রাকচারাল প্রোটিন তৈরির জিন যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এটি মানুষের শরীর চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে, কিন্তু, সব সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সমান কার্যকরী নয়। ডেংভ্যাক্সিয়ার কার্যকারিতা প্রায় ৮০ ভাগ।

ডেংভ্যাক্সিয়া ব্যবহারের সবচেয়ে সীমাবদ্ধতা এবং ঝুঁকি হলো এটি শুধুমাত্র সে সব রোগীকে দেওয়া যায় যারা পূর্বে অন্তত একবার ডেঙ্গু দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলো। দেখা গেছে যাদের আগে ডেঙ্গু হয়নি কিন্তু ডেংভ্যাক্সিয়া নেওয়ার পর প্রথমবার প্রকৃত ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হলে রোগটি গুরুতর রূপ নেয়। এর কারণ হলো—

টিকার মাধ্যমে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা আসল ভাইরাসকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে পারে না বরং ভাইরাসকে কোষে ঢুকতে সাহায্য করে এবং এতে সংক্রমণ আরও তীব্র হয়। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ADE বা Antibody-Dependent Enhancement।

সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ডেংভ্যাক্সিয়া দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব বাজারে ডেংভ্যাক্সিয়ার চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায়, স্যানোফি আগামী বছর থেকে এটির উৎপাদন বন্ধ করে দেবে জানিয়েছে।

কিউডেঙ্গা (Qdenga বা TAK-003)

কিউডেঙ্গা (Qdenga বা TAK-003) একটি আধুনিক টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু ভ্যাকসিন। এটি ডেঙ্গুর একমাত্র ভ্যাকসিন যেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত। বিশ্বের প্রায় চল্লিশটি দেশে কিউডেঙ্গা অনুমোদিত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এটি দুটি ডোজে তিন মাস পর পর ৬-১৬ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরদের জন্য ব্যবহার করা যায়। তবে ইউরোপসহ অনেক দেশে এটি চার বছর বয়সী শিশু ও ৬০ বছর বয়সের নিচের যেকোনো বয়সের মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য বলছে, এটির কার্যকারিতা প্রায় ৮০ ভাগ।

কিউডেঙ্গা একটি লাইভ এটেনুয়েটেড টেট্রাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন। এ ভাইরাসটি তৈরিতে DENV-2 ভাইরাসের জিনোমের মধ্যে বাকি তিনটি সেরোটাইপের সার্ফেস প্রোটিনের জিন যুক্ত করে তৈরি করা। এর ফলে এটি চার প্রকারের সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এটি সব সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সমান প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম নয়। কিউডেঙ্গা DENV-1 এবং DENV-2 এর বিরুদ্ধে ভালো সুরক্ষা দিলেও DENV-3-এর বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা তুলনামুলকভাবে কম।

কিউডেঙ্গার সুবিধাজনক দিক হলো এটি গ্রহণের জন্য পূর্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে হবে এরকম বাধ্যবাধকতা নেই এবং বেশ নিরাপদ।

বুটানটান ডিভি (Butantan-DV)

সম্প্রতি ব্রাজিল তাদের নিজস্ব ল্যাবে তৈরি ডেঙ্গুর এক ডোজের বুটান্টান ডিভি (Butantan-DV) ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ৩য় ধাপের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চমৎকার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ বছরের ২৬ নভেম্বর ব্রাজিল সরকার এটি নিজ দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

বুটান্টান ডিভি ব্রাজিলের বুটানটান ইন্সটিটিউটের তৈরি একটি লাইভ এটেনুয়েটেড টেট্রাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন যা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ-এর TV003/TV005 প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই ভ্যাকসিনে ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপকেই দুর্বল করে একত্রে দেওয়া হয়েছে, তাই এটি ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই সমানভাবে কাজ করে। ৩য় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল অনুযায়ী ১২-৫৯ বছর বয়সী মানুষে এটির কার্যকারিতা প্রায় ৮০ শতাংশ এবং বেশ নিরাপদ (তথ্যসূত্র ১)।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল

বুটান্টান ডিভি যে প্রযুক্তিতে তৈরি তার একটি হলো TV005। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লার্নার কলেজ অব মেডিসিন এবং বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি'র গবেষকরা যৌথভাবে দেশে TV005 ডেঙ্গু টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল পরিচালনা করেছিলেন।

ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের উচিত অতি দ্রুত কিউডেঙ্গা বা বুটানটান ডিভি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া এবং গাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা নিয়ে ডেঙ্গু সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোয় অন্ততপক্ষে ১২-৩০ বছরের শিশু ও যুবক-যুবতিদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন প্রদান করা।

১৯২ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরিচালিত সে ট্রায়ালের ফলাফল ২০২৪ সালে The Lancet Infectious Diseases জার্নালে প্রকাশিত হয় (তথ্যসূত্র ২)। তিন বছর ফলো আপের ফলাফল অনুযায়ী TV005 ডেঙ্গু ভ্যাকসিনটি চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই পর্যাপ্ত ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম, সহনশীল এবং নিরাপদ।

দেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন এখনো বাজারজাত করা হচ্ছে না কেন?

বিশ্বের অনেক দেশে অনেক বছর আগে থেকে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হলে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে না এবং বাংলাদেশ সরকার এখনো কোনো ডেঙ্গু ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়নি। এর একটি কারণ হতে পারে দেশে ডেঙ্গু এখন এন্ডেমিক বা স্থানীয় পর্যায়ে আছে এবং এতদিন সব ধরনের সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সমানভাবে কার্যকরী ভ্যাকসিন না থাকা।

যেমন- কিউডেঙ্গা বেশ নিরাপদ ও কার্যকরী হলেও এটি DENV-3 সেরোটাইপের বিরুদ্ধে তুলনামুলকভাবে কম সুরক্ষা দেয়। অতীতের রেকর্ড বলছে বাংলাদেশে কোনো বছরে DENV-2, আবার কোনো বছরে DENV-3 বা DENV-1 সেরোটাইপ প্রাধান্য পায়। তাই কিউডেঙ্গার কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিউডেঙ্গা সব সেরোটাইপের বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও, DENV-3–এর বিরুদ্ধে কার্যকারিতা তুলনামূলক কম। ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের জন্য DENV-3 সেরোটাইপ প্রধান ভূমিকা রেখেছিলো। তাই, কিউডেঙ্গার কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে।

তবে, ব্রাজিলের অনুমোদিত বুটানটান ডিভি এতদিনের সব সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সমান কার্যকরী ভ্যাকসিনের স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছে। শুধু তাই নয় এটি এক ডোজেই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেয় এবং নিরাপদ। একই প্রযুক্তির TV005 ভ্যাকসিন আমাদের দেশে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভালো ফল দিয়েছে। তাই, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আমাদের দেশের জন্য ব্রাজিলের বুটানটান ডিভি হতে পারে সবচেয়ে সুবিধাজনক, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।

ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের উচিত অতি দ্রুত কিউডেঙ্গা বা বুটানটান ডিভি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া এবং গাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা নিয়ে ডেঙ্গু সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোয় অন্ততপক্ষে ১২-৩০ বছরের শিশু ও যুবক-যুবতিদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন প্রদান করা।

তথ্যসূত্র:

১। Kallás EG et al, 2024, Live, Attenuated, Tetravalent Butantan-Dengue Vaccine in Children and Adults. N Engl J Med. 1;390(5):397-408. doi: 10.1056/NEJMoa2301790. PMID: 38294972.

২। Walsh, Mary-Claire R et al. 2024, Safety and durable immunogenicity of the TV005 tetravalent dengue vaccine, across serotypes and age groups, in dengue-endemic Bangladesh: a randomised, controlled trial, The Lancet Infectious Diseases, Volume 24, Issue 2, 150 – 160।

ড. মো. আজিজুর রহমান : অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ajijur.rubd@gmail.com