টেকসই পরিকল্পিত নগরায়ণ
ঢাকার নগর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও উত্তরণের উপায়
শহর ঢাকা কী হতে চায় এবং ঢাকাবাসীদের আকাঙ্ক্ষা কী?—এই দুইটি মৌলিক প্রশ্নকে সামনে রেখে স্কটিশ শহর পরিকল্পনাবিদ ও সমাজবিদ প্যাট্রিক গেডেস [Patrick Geddes] ১৯১৭ সালে ঢাকা শহরের প্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশে নগর পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে ১৯৫৯ সালে, যখন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উদ্যোগে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)’—বর্তমান রাজউক—ঢাকার প্রথম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে।
এই পরিকল্পনা আধুনিক ঢাকার শহর উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ঢাকার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন পিছিয়ে থাকলেও ১৯৯৭ সালে রাজউকের ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ডিএমডিপি) ১৯৯৫–২০১৫’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। তিন স্তরবিশিষ্ট এই পরিকল্পনা—স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)—ঢাকার প্রথম সর্বাঙ্গীণ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন উদ্যোগ হিসেবে নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই মহানগর গঠনে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
বিজ্ঞাপন
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ড্যাপ (২০১০–২০১৫)’ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। যদিও ২০১৬ সালে প্রণীত ‘খসড়া ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬–২০৩৫)’ গেজেট হয়নি, তবে একে ভিত্তি করেই পরবর্তী পর্যায়ে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ১,৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সমন্বিত ও টেকসই নগর উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন ‘ড্যাপ ২০২২–২০৩৫’ কার্যকর করা হয়।
টেকসই পরিকল্পিত ঢাকা শহর গড়ে তোলার প্রধান চ্যালেঞ্জ আসলে কোথায়? যদিও ঢাকা কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে শাসন সুবিধার জন্য কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শোষণ সুবিধার জন্যও, কিন্তু ঢাকা’র অতীব প্রয়োজনীয় বিকেন্দ্রীকরণ, সম্ভাবনাময় বিচ্ছুরিত নগরায়ন, সাম্যতার ভিত্তিতে সম্পদের বণ্টন ও বিনিয়োগ সবসময়ই অবহেলিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ফলশ্রুতিতে, আজকের যে ভারাক্রান্ত ঢাকা মহানগরী তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রীভূত নগরায়নের ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ১ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত ঢাকা মহানগর এলাকা সমগ্র দেশের নগর জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ নিয়ে মোট জিডিপিতে ৩৩ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখছে।
স্বাধীনতার পর রাজধানীর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন শুরু করতে প্রায় ২৫ বছর বিলম্বের দীর্ঘ যাত্রা মূলত একটি বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে—পরিকল্পিত উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা। ততদিনে ঢাকা শহরের আয়তন বেড়েছে ২৫ গুণ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ৩০ গুণ, একইসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগরের অভিঘাত—বন্যা, জলাবদ্ধতা, যানজট, দূষণ ও দুর্যোগ ঝুঁকি।
দুইটি মৌলিক প্রশ্নকে সামনে রেখে স্কটিশ শহর পরিকল্পনাবিদ ও সমাজবিদ প্যাট্রিক গেডেস ১৯১৭ সালে ঢাকা শহরের প্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন।
সত্যিকার অর্থে ভারসাম্যহীন উন্নয়ন এবং বিবিধ নগর দূষণের (জল-জন-জমি-বায়ু-শব্দ-বর্জ্য-তাপ) মাধ্যমে বর্তমানে এই নগর বা তার নগরায়ন বিকলাঙ্গ এক প্রজন্ম তৈরি করছে, যা একটি গভীর সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করে। আর অভিঘাত সহিষ্ণু নগরী তৈরির যে প্রয়োজন এবং সম্ভাবনা ছিল সেটা তৈরি না করতে পারার কারণে অভিঘাত সংকট প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আদৌও কি কোনো সুযোগ রয়েছে? অবশ্যই আছে, রয়েছে অপার সম্ভাবনাও। ড্যাপ (২০২২–২০৩৫) অনুযায়ী ঢাকার ৯৪ শতাংশ ভবনই অননুমোদিত; ৬৮ শতাংশ একতলা এবং ৬০–৭০ শতাংশ কাঁচা–সেমিপাকা, ফলে মাত্র ৮–১০ শতাংশ ভবনের তুলনামূলক স্থায়ী/ সর্বোচ্চ উন্নয়ন হয়েছে।
এ বাস্তবতা দেখায় যে পুনর্গঠনের বড় সুযোগ এখনো রয়েছে। প্রবল সম্ভাবনার জায়গাগুলোয় দৃষ্টি না দিয়ে, নীরব থাকা এবং উন্নয়নের জন্য নীতিমালা তৈরি করেও কার্যকর না করা কেবল ব্যর্থতা নয়, অন্যায়ও বটে। তাই বলা যায় যে অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন, তদারকির অভাব ও দীর্ঘদিনের ভুল নীতির কারণে ‘বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির নগরায়ণ’ চলছে। নগরজীবনের অভিঘাত ও দূষণের তীব্রতায় আজ যে কাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ দেখব, তাই অনিশ্চিত!
অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাধার ও কৃষিজমি ধ্বংস এবং অনুমোদনহীন ভবনই বর্তমান সংকটের অন্যতম মূল কারণ। তাই এখনই বিকেন্দ্রীকরণ, সাম্যভিত্তিক সম্পদ বণ্টন ও অভিঘাত-সহিষ্ণু নগরব্যবস্থা গড়ে তোলা নিশ্চিত না করলে শুধুমাত্র ঢাকা শহরই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক নগরী তৈরিতে সঠিক নগর-দর্শন ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিম্নোক্ত পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ এখনই নেওয়া যেতে পারে।
১. ঢাকা নগরীর অননুমোদিত ও আপাত বিপদজনক ভবনসমূহ নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে রাজউক ২০২৩ সাল থেকে বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবী অংশীজনদের সাথে একাধিক সভায় মাধ্যমে আলোচনা ও পর্যালোচনার মধ্যমে ‘ঢাকা মহানগর এলাকায় অনুমোদনহীন/ইমারতের বিচ্যুতি/ব্যত্যয় সংক্রান্ত ইমারতের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে নীতিমালা (খসড়া)’ প্রস্তুত করে ২০২৪ সালের মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত কমিটি দ্বারা অনুমোদিত হয়। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও ড্যাপ ২০২২–২০৩৫–এ রয়েছে।
নিরাপদ নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং অনুমোদিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে অভিঘাত সহনশীল নগরী গড়ে তোলার জন্য উক্ত নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে বাস্তবায়ন করা আশু প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে এই নীতিমালার উদ্দেশ্য শাস্তি নয়—বরং পুনঃউন্নয়ন ফান্ডের মাধ্যমে ভবনকে নিয়মের মধ্যে আনা। নীতিমালা কার্যকর হলে অবৈধ/বিচ্যুত ভবনগুলো সংশোধিত এবং প্রয়োজনীয় পরিমার্জন সাপেক্ষে যথাযথ ও নিরাপদ করার সুযোগ তৈরি হতো।
আরও পড়ুন
২. ১৯৯৩ সালে তৈরি হয়ে ২০০৬ সালে গেজেট হওয়া বিএনবিসি কখনোই যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২১ সালে হালনাগাদ হয়ে BNBC 2020 প্রকাশিত হলেও এর নির্দেশিত বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (BBRA) এখনো গঠিত হয়নি। অথচ সারা দেশে নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতে এটি জরুরি।
যদিও আশার কথা এই যে, ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে বিবিআরএ গঠন ও তার কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রণয়নকৃত খসড়া অধ্যাদেশ সর্বসাধারণের মতামত প্রদানের নিমিত্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে বিএনবিসি অনুসারে ভবন নির্মাণ নিশ্চিতে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উচিৎ দ্রুততম সময়ে প্রকাশিত খসড়া অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণপূর্বক কর্তৃপক্ষ গঠন করে দেশব্যাপী সক্ষমতা ও সামর্থ্য তৈরি করা।
পাশাপাশি প্রতিটি ভবনকে অডিটপূর্বক ফি বছর নবায়নযোগ্য সার্টিফিকেশনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন এবং এ লক্ষ্যে রাজউক, ফায়ার ব্রিগেড ও সিটি কর্পোরেশনের সাথে সেবাদানকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করাও প্রয়োজন। মনে রাখা প্রয়োজন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ‘অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স’ এর চাপে গার্মেন্টস খাতকে আমরা মাত্র তিন বছরে পরিবেশবান্ধব শিল্পে রূপ দিয়েছি। তাহলে জনগণের চাপ কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি? উপযুক্ত জবাবদিহির চাপ তৈরি হলে ভবন খাতেও একই পরিবর্তন সম্ভব।
৩. ২০১৫ সালে রাজউকের ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প (ইউআরপি)’ গ্রহণ করা হয় নগরের অবকাঠামোর ঝুঁকি মূল্যায়ন, বিল্ডিং কোড শক্তিশালীকরণ, জরুরি সাড়া সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ-সহনশীল নগরব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে সমীক্ষা ও প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হলেও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান না করায় প্রকল্পের বাস্তব প্রয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফলে দক্ষ জনবল অব্যবহৃত থাকছে, আর কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাম্প্রতিক বছরে বারবার মাঝারি থেকে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। তাই ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণে এই ইউআরপি প্রকল্পের পাশাপাশি ভূমিকম্প প্রস্তুতির জন্য প্রণয়নকৃত ‘আপদকালীন পরিকল্পনা (কন্টিনজেন্সি প্ল্যান)’ (সিডিএমপি, ২০১০)-এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ এখনই প্রয়োজন। একইসাথে দুর্যোগ পরবর্তী আপদকালীন স্থান হিসেবে নগর জুড়ে রিফিউজ স্পেস, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, ব্লু- নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা এবং কমপক্ষে ২০ ফুট প্রশস্ততার সড়ক নির্মাণ করা আবশ্যক।
৪. নগর সুব্যবস্থাপনায় এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে দুটি বিশেষ ধারণা বা টুল রয়েছে; একটি হচ্ছে, ‘উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময় বা ট্রান্সফার অফ ডেভেলপমেন্ট রাইটস (টিডিআর)’ এবং আরেকটি হলো, ‘ব্লক ভিত্তিক উন্নয়ন বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট’। ড্যাপ ২০২২-২০৩৫-এ এই দুটি ধারণার কথা উল্লেখ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে শাসন সুবিধার জন্য কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শোষণ সুবিধার জন্যও, কিন্তু ঢাকা’র অতীব প্রয়োজনীয় বিকেন্দ্রীকরণ, সম্ভাবনাময় বিচ্ছুরিত নগরায়ন, সাম্যতার ভিত্তিতে সম্পদের বণ্টন ও বিনিয়োগ সবসময়ই অবহেলিত হয়েছে।
‘উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়’ বা টিডিআর হলো জমির মালিকানার অধিকার থেকে উন্নয়ন করার অধিকার আলাদা করে তা অন্য এলাকায় বিক্রি বা স্থানান্তরের একটি ব্যবস্থা। যেখানে উন্নয়ন সীমিত—যেমন কৃষিজমি, জলাধার, বন্যাপ্রবাহ এলাকা বা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা—সেসব এলাকার মালিকরা অব্যবহৃত এফএআর অন্য মালিক বা ডেভেলপারের কাছে বিক্রি করতে পারেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সংরক্ষিত থাকে, জমির মালিক আর্থিক ক্ষতি এড়ায়, আর গ্রহণকারী এলাকা অতিরিক্ত নির্মাণের সুযোগ পায়। পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো সংবেদনশীল এলাকা রক্ষা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় স্থানে উন্নয়ন উৎসাহিত করা।
‘ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন’ হলো বিচ্ছিন্ন ছোট প্লট একত্র করে বড় ব্লক তৈরি করে তার নির্দিষ্ট অংশ উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষণ এবং বাকি অংশে বহুতল ভবন নির্মাণের একটি পরিকল্পিত নগরায়ণ পদ্ধতি। এতে সমন্বিত, বাসযোগ্য ও সুসংগঠিত নগর কাঠামো গড়ে ওঠে। বড় ব্লক হলে বেশি খোলা জায়গা রাখতে হয়, যা পরে পার্ক বা সবুজ এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিনিময়ে ডেভেলপার অতিরিক্ত এফএআর পায়।
এভাবে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন পার্ক, বায়ুপ্রবাহ ও খোলা স্থান নিশ্চিত করে এবং পরিকল্পিত উচ্চ ঘনত্বের আবাসন গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। উপযুক্ত প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে ‘ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন’ হতে পারে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন পরিবর্তে পুনঃউন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই ঢাকা শহরের পুনঃউন্নয়নকল্পে ‘উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়’ ও ‘ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন’ সম্পর্কিত আলোচনা, সংলাপ এবং উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আশু কাম্য।
৫. দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্স অংশকে শক্তিশালী করতে হবে। সিভিল ডিফেন্স-এর গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক হচ্ছে সচেতনতা (Awareness) এবং প্রস্তুতি (Preparedness)। পাড়া-মহল্লা-অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী নাগরিক দল গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত দুর্যোগ মোকাবিলায় মহড়া পরিচালনা করার পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে এ বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতীব জরুরি।
প্রয়োজনে ফায়ার কোড প্রণয়ন, ফায়ার একাডেমী বা ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, দেশব্যাপী স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলার সচেতনতা ও প্রস্তুতি কমিউনিটি লেভেলে দৃঢ়ভাবে প্রথিত করাই আবশ্যক।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রদানের এখনই উপযুক্ত সময় কারণ বিভিন্ন ধরনের অভিঘাতসমূহ ভয়ংকরভাবে নগর তথা সমগ্র দেশব্যাপী কড়া নাড়ছে। তাই সামগ্রিকভাবে এদেশের জন ও জীবন রক্ষায় অন্যান্য যেকোনো কার্যক্রমের তুলনায় উক্ত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
অতএব কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নের কার্যক্রমের শুরু অন্তত এখনই হোক যাতে করে নতুন নির্বাচিত সরকার তা বাস্তবায়নে আরও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে। তাই শুরুটা যেন কাল নয়, আজই হয়।
ইকবাল হাবিব : স্থপতি, সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (এসএএফ) সহসভাপতি