ছবি : সংগৃহীত

আমরা দেখছি নিকট অতীতে যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকে, তখন সেই সংগঠনের নেতা-কর্মী, অনুসারীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের জীবন হয়ে ওঠে অনেকটা নির্বাসনের। বিদ্যায়তনে অবস্থান করারও সুযোগ হয়ে ওঠে না তাদের। ঐ সংগঠনটিই যখন ক্ষমতায় যায়, তখন অপার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিদ্যায়তন থেকে উৎখাত করাসহ ক্ষমতাবলয়ে তারা অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সরকারি- বেসরকারি দফতরের নিয়োগ, টেন্ডার থেকে বিভিন্ন লেনদেন, কেনাবেচার মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাস ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও নাম চলে আসে দলের নেতা - কর্মীদের।

সংগঠনগুলো এতোটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে একসময় সমাজ থেকে, জনগণের দিক থেকে—তাদের সামলানোর দাবি ওঠে। ছাত্রলীগের ক্ষেত্রেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আদর্শিক রাজনীতির ধারক এই সংগঠন নিয়ে এই দাবি ওঠার কথা ছিল না। সংগঠনের আদর্শিক নেতারা এতে বিব্রত হয়েছেন। প্রতিবাদও করেছেন।

বিদ্যায়তনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করার পাশাপাশি ছাত্রলীগ এই আদর্শিক ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক।

সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের জীবন যাপন, আচরণ, বৈভব মূল দলের নেতা, মন্ত্রীদেরকেও ছাপিয়ে যায়। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মতো  সুবিধা, ভোগ-উপভোগ করতে থাকেন। যা কোনো কোনো সময় মূল দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদেরও বিব্রত করেছে।

মাত্রাজ্ঞান লঙ্ঘন করার শাস্তিও পেতে হয়েছে কাউকে কাউকে। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে, প্রশ্রয় পায়নি। কিন্তু কোথাও না কোথাও প্রশ্রয়ের ‘ছাতা’ থাকেই। সেই ছাতা মেলে রাখার কারণ- গাড়ি বহরের সঙ্গে মোটর শোভাযাত্রা দীর্ঘ করা।

আদর্শিক নেতার চেয়ে নিজের নাম অধিক জপানো। নিজের ভোট, ভোগ, দখলে ছাত্র সংগঠন ও কর্মীদের ব্যবহার করা। ছাত্রলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাকে কিছু ইশতেহারের সঙ্গে এমনিতেই যুক্ত করে রাখে। স্বাধীনতা বা বাংলাদেশে অবিশ্বাসী পক্ষকে রুখে দাঁড়ানো, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই।

বিদ্যায়তনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করার পাশাপাশি ছাত্রলীগ এই আদর্শিক ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রলীগকে যারা নিজেকে ক্ষমতার বলয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করছে, আদর্শ থেকে সরিয়ে এনে বহু ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির দিকে ধাবিত করছে।

সংগঠনে বহিরাগত অনুপ্রবেশে উদ্বুদ্ধ করছে, ছাত্রলীগকে সেই চক্র থেকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বিমুখ করা, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী, পান্ডা, ক্যাডার যুক্ত করে দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বে তাদের আসার পথ রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্র পুরনো।

ছাত্র রাজনীতিকে জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই নিজস্ব গৌরবের রাজপথে নেমে আসতে হবে। আদর্শিক রাজনীতিতে ফেরা, নেতৃত্ব তৈরির অভিযান শুরু হোক ৭৪ বছরের ঐতিহ্যের ধারক সংগঠনটিকে দিয়েই।

আজকের রাজনীতির উপরিভাগ দেখলেই সেই ষড়যন্ত্রের ফলাফল দেখতে পাই। কিন্তু আর নয়। ছাত্র রাজনীতিকে জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই নিজস্ব গৌরবের রাজপথে নেমে আসতে হবে। আদর্শিক রাজনীতিতে ফেরা, নেতৃত্ব তৈরির অভিযান শুরু হোক ৭৪ বছরের ঐতিহ্যের ধারক সংগঠনটিকে দিয়েই। অন্যরা অনুসরণ করুক তাদের।

ছাত্রসংগঠন মাত্রই এই উপলব্ধি ধারণ করতে হবে, তাদের মাতৃ-পিতৃ সংগঠনের হয়ে কাজ করার পাশাপাশি, জাতীয় দায়িত্ব তাদের কাঁধে ভর করে আছে। সেদিক থেকে ছাত্রলীগের কাঁধ বেশ চওড়া। তাদের অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের কারণে।

সেই কাঁধে বিজয়ের ৫০ এবং সংগঠনের ৭৪-এ এসে অনেক দায়িত্ব তুলে নিতে হচ্ছে। জনগণ, রাষ্ট্র, সামষ্টিকভাবে হয়তো অনেক দায়িত্বই দেবে। শুধু বলতে চাই, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও লড়াইয়ে যুক্ত হোক ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বের পরম্পরায় দেখতে চাই তাদের বলিষ্ঠ অবস্থান।

প্রত্যাশা শেষমেশ করেই ফেললাম। কী আর করা, সব হিসাব-নিকাশ শেষে তারুণ্য ছাড়া আর কোনো ভরসার জায়গা খুঁজে পাই না।

তুষার আবদুল্লাহ ।। গণমাধ্যমকর্মী