২০১০-২০১৪ সালের মার্চ অব্দি ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে আমার পথচলা আর তার অভিজ্ঞতার আলোকেই ক্যান্সার নিয়ে কিছু লেখার স্পর্ধা করছি। ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার হেন কোনো হাসপাতাল নেই ছুটে বেড়ায়নি, একটা সময় চলে গেছি পাশের দেশ, ভারতের মুম্বাই শহরে। খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেছি উপমহাদেশের ক্যান্সার বিজ্ঞানী ডা. এস এইচ আদভানির চেম্বারেও। 

ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজন এমন কি নেই বাংলাদেশে? বিশ্বাস করুন, গড়পড়তায় সব আছে। তবু কেন এত হাহাকার, অভিযোগ, হতাশা। বলতে পারেন অপ্রতুল, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ার কারণে সাধের বিবেচনায় সাধ্য কম। তবে এই সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে কম চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও আন্তরিকতা। 

আমার দেশে এমনই চিকিৎসক আছেন যাদের সুনাম এই উপমহাদেশেও নিতান্ত কম নয়। দেশের চিকিৎসায় আস্থা না পেয়ে পাশের দেশের চিকিৎসকের কাছে তাদের প্রশংসা শুনতে হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। তারাই বলেছে, দেশে উনাকে রেখে এতদূর আসলে? এই তিরস্কার মাথায় নিয়েও আস্থার ঘাটতি খুঁজতে বসলেই কিছু বিষয় প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। 

ক্যান্সার চিকিৎসা শুধু ওষুধ গ্রহণ নয়, দীর্ঘ এই প্রক্রিয়া যতদিন চিকিৎসা চলে ঠিক ততদিন নাজুক থাকে রোগীর শরীর। প্রতিদিন তার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। এমন যখন বাস্তবতা তখন শুধু ওষুধ দিয়েই দায়সারা থাকার কোনো সুযোগ নেই রোগী এবং তার পরিবারের। আর তখন আমাদের মেনে নিতে হয়, রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের স্বল্পতা আর তাই কাউন্সিলিং-এ কম সময়। এরপর চিকিৎসা নেওয়ার পর শরীরের সাইড ইফেক্টগুলো সারাতে দৌড়াতে হয় নিজেরই। 

শুধুমাত্র পাশের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাতে এই ত্রুটিগুলো নেই বললেই চলে। সমান সক্ষমতা নিয়েও আমরা পিছিয়ে পড়ছি শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির জন্য। একটু খুলেই বলি, ধরুন আপনাকে কেমো নিতে হবে ২১ দিন পর পর। কেমো নেওয়ার আগে এবং পরে চলে প্রতিনিয়ত বেশকিছু ডায়াগনোসিস।

কেমো নেওয়ার পরপরই বেশকিছু সাইড ইফেক্টস আসে, রক্ত কণিকায় অনেক কিছুই কমে আসে স্বাভাবিকের চেয়ে। তখন আপনাকে দ্রুত সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হয়। বহু কষ্টে আপনি চিকিৎসকের সিরিয়াল পেয়েছেন, কোমো দিয়েছেন কিন্তু এরপর কি প্রতিদিনের সাইড ইফেক্ট সামলাতেও আপনাকে সেই বিশেষজ্ঞ সময় দিতে পারবেন? এই বাস্তবতা কি আছে? অগত্যা আপনাকে হাসপাতালে ছুটে ছুটে নিজেই সেই ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে। 

অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশে আপনি পাবেন সেই ফলোআপ। চিকিৎসকের অ্যাসিটেন্ট আপনাকে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সামলাতে সহযোগিতা করবেন। হাসপাতালে আলাদা করে দ্রুত ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রতিটা জিনিস আপনাকে নজরে রাখবেন তারা আন্তরিকতার সাথে।

যথার্থ কাউন্সিলিং-এর জন্য জানবেন কীভাবে আপনি প্রতিটি মুহূর্ত প্রস্তুতি নেবেন। যদিও গেল সাত-আট বছরে এই ব্যবস্থাগুলো বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে আন্তরিকতার সাথে করার চেষ্টা করছে। 
সকল সক্ষমতা থাকার পরও শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কাছে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। সুন্দর সুদিনের অপেক্ষায় থাকলাম, ক্যান্সার চিকিৎসা হোক সহজতর, পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত। 

রাফে সাদনান আদেল ।। সংবাদ ও যোগাযোগকর্মী