মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর / ছবি ফাইল

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অহেতুক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২ জুন) ঢাকা জজকোর্টে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত  আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলছেন তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমরা যখন এ কথাগুলো বলছি, সরকার এসব নাকচ করে দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারে একজন তথ্যমন্ত্রী আছেন। তার দাবি, আমরা নাকি বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজনীতি করছি। তার লজ্জা হওয়া উচিত। আমি আবারও বলছি, খালেদা জিয়া সম্পর্কে কখনও বেশি কথা বলবেন না। দেশের মানুষ এটা ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। আপনি যেখানে আছেন সেখানে থাকুন। খালেদা জিয়ার নাগাল পেতে হলে আপনাকে বহুদূর যেতে হবে। যেটা আপনাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

জিয়াউর রহমানের সবকিছু মুছে ফেলার জন্য আওয়ামী লীগ ইতিহাসকে বার বার বিকৃত করছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালের কালো রাতে গোটা জাতি যখন অপেক্ষা করছিল যে একটা রাজনৈতিক দল থেকে কোনো ঘোষণা আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা সে নির্দেশ তারা পায়নি। ওই সময় আমাদের মূল নেতা (শেখ মুজিবুর রহমান) যিনি ছিলেন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অন্য অনেক রাজনৈতিক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সেই সময় অখ্যাত এক মেজর সামনে এসে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। যেটা সবারই জানা।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে মানুষের যে আশা আকাঙ্ক্ষা সেটা আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে এবং অবহেলা করে তাদের দলীয় লোকদের দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সারাদেশে তারা লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি করে। আমাদের যেসব অর্জন ছিল সেগুলো তারা ধূলিসাৎ করে দেয়। আমাদের সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক বিষয়গুলো ছিল তা বাদ দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা শুরু করে। তখন অনেকেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তাদের দমন করার জন্য রক্ষীবাহিনী তৈরি করেন। সে বাহিনী দিয়ে নির্মমভাবে বিরোধী মতকে দমন করা হয়েছিল।

আজকে বিচার ব্যবস্থা একটা দলের হাতে চলে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যা চায় বিচার তাই হয়। আমরা যারা রাজনীতি করি বা যারা সাধারণ মানুষ আছেন তারা সবাই সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে সেটা টেকেই না। এই মামলার যেদিন চার্জ গঠন করার সময় ছিল সেদিনই সেট নিষ্পত্তি করা যেত। কিন্তু সেটাতে সরকার অবৈধভাবে বাধা দিয়েছে। এভাবে সরকারের ইচ্ছামতো ফরমায়েশি রায় ইতিহাসে নেই। এর ফলে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ভাবে কারাবরণ করছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার থেকে সরকার বঞ্চিত করেছে। ৩৫ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। ম্যাডাম যে মামলায় কারাবরণ করছেন সেই মামলায় সরকারের অনেক মন্ত্রী জামিনে আছেন। কিন্তু ম্যাডামকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তারা জানে ম্যাডাম যদি বাইরে থাকেন তাহলে তাদের রাজনীতি আর চলবে না।

আমরা নাকি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবছি না। আমরা আর কী এমন বলি। সরকার তো পুরো স্বাস্থ্য খাতকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এ করোনাকালেও তাদের দুর্নীতি থেমে নেই। সেই টাকা দিয়ে তারা বিদেশে বাড়ি করেছে।

ঢাকা বার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা বার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।

এএইচআর/এসকেডি