পুরনো দাবিতে ৫ সিটিতে সমাবেশ করবে বিএনপি
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির হয়ে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়রপ্রার্থীরা
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের দাবিতে পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরের থাকা বিএনপি। সমাবেশ শুরু হবে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে। ৪ মার্চের আগেই পর্যায়ক্রমে সমাবেশগুলো শেষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
মঙ্গল ও বুধবার (২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) এবং চট্টগ্রামসহ ছয় সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় মেয়রপ্রার্থীদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হওয়া বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্ট-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ওই ছয় মেয়রপ্রার্থী হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী ইশরাক হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের তাবিথ আউয়াল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনা সিটি করপোরেশনের নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের মজিবুর রহমান সারোয়ার।
সূত্র জানায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগীয় শহরে মোট ছয়টি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর মধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আলাদাভাবে সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশে দলের ছয় মেয়রপ্রার্থীই উপস্থিত থাকবেন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘গত দুদিন আমাদের মেয়রপ্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। তিনি নির্বাচনে আমাদের কী অভিজ্ঞতা হয়েছে তা শুনতে চেয়েছেন। কীভাবে ভোট ডাকাতির নির্বাচন হয়েছিল, আমরা তা বলেছি। এছাড়া আমাদের দলের কী কী দুর্বলতা ছিল, সেইগুলোও তুলে ধরছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকার ও বর্তমান ইসির পদত্যাগের দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার আলোচনা হয়েছে।’
সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশে ভোট বলতে কিছু নেই। দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত করা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভাগীয় শহরে সমাবেশগুলো করতে চাচ্ছি।’ করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সমাবেশ করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে বেশি আলোচনা হয়েছে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন নিয়ে। চসিকে দলটির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বৈঠকে উল্লেখ করেন, নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাসীন দল (আওয়ামী লীগ) ‘ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির’ মাধ্যমে ধানের শীষের বিজয় ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। একইসঙ্গে নির্বাচনে দলের একটা অংশ কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল। এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এরপর প্রার্থীরা নিজ নিজ শহরে সমাবেশ করার প্রস্তাব দিলে, এতে সম্মতি দেন তারেক রহমান।
জানতে চাইলে চসিক নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে সমাবেশ শুরু হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষ সাড়া দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে দলের কার কী ভূমিকা ছিল, সেগুলো তুলে ধরেছি। তবে দলের বিষয়ে দলীয় ফোরামের বাইরে কথা বলা নিষেধ আছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে থাকা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এই সমাবেশগুলো দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে পুরোদমে আবার ফিরে আসতে চায় বিএনপি। এসব সমাবেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, সরকারের দুর্নীতিসহ বেশ কিছু ইস্যু জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হওয়া ছয় মেয়রপ্রার্থীর উদ্যোগে। সব সমাবেশে এসব মেয়র প্রার্থীরা থাকবেন। তারা নিজ নিজ সিটিতে কী ধরনের ভোট অনিয়ম হয়েছে তা তুলে ধরবেন।’
লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ছয় সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলটির মেয়রপ্রার্থীরা।
এইচআর/এফআর