সংগৃহীত ছবি

‘বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের যেন আজ ঈদের দিন। ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা’ পরিস্থিতি জানার জন্য যখনই রাষ্ট্রদূতকে ই-মেইল করতাম, তখনই তিনি এর জবাব দিয়ে আশ্বস্ত করতেন। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিষয়েও বলতেন। ধন্যবাদ প্রিয় অভিভাবক।’

আবেগাপ্লুত হয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন দেশে ছুটিতে গিয়ে আটকে পড়া এক বাংলাদেশি। তিনি বলেন, ‘ভিসা প্রত্যাহারের বিষয়টি সর্বপ্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। আমরা হাজারো প্রবাসী এই দিনটির অপেক্ষায়ই ছিলাম।’

বাংলাদেশের ওপর ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশিরা এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমে (ইপিএস) ভিসার জন্য আবেদন জমা দিতে পারবে। এ খবরে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের প্রশংসায় কোরিয়ায় অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় অবস্থিত  দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছে।

ফলে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিকরা ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। এমনটি নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজও।

ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ইতোপূর্বে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশসহ বেশকিছু দেশের নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশের ওপর ‘সাময়িক নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে। এতে করে কোরিয়া গমনেচ্ছু বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা ও কর্মীর কর্মজীবন হুমকির মুখে পড়ে।

এ অবস্থায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস শুরু থেকেই এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ব্যক্তিগতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন একাধিকবার ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেন কিউনের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের তাগিদ দেন। পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দেশটির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত অনুবিভাগ এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা চলমান সময়ে একদিকে কোরিয়া গমনেচ্ছু বিপুল সংখ্যক উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের সঙ্গে অন্যদিকে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা পালন করে।

বি এস কে সভাপতি শাহ আলম জানান, করোনাভাইরাসের কারণে কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে দেশে আটকা পড়ে প্রবাসীরা। তাদের ফেরাতে কোরিয়ার সরকারের প্রতিটি সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম নিরন্তর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এমএইচএস