বাংলাদেশে পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় একীভূত করার জন্য সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড প্যারালাইজড (সিআরপি) গত ৪৩ বছর ধরে কাজ করছে।

ভ্যালেরি টেইলর ট্রাস্ট এবং সিআরপির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রবাসীদের অবহিত করার লক্ষ্যে গত ১৬ জুলাই সেন্ট্রাল লন্ডনের কেমডেন এলাকার ড্রামন্ড স্ট্রিটের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে সচেতনতামূলক সভায় মূল বক্তার বক্তব্যে ভ্যালরি টেইলর ট্রাস্ট ও সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি টেইলর ওবিই এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ঢাকা পোস্ট যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ও অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর সম্পাদক মুহিব উদ্দিন চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন টিভি প্রেজেন্টার ও অনুষ্ঠানের আয়োজক হেনা বেগম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেমডেন কাউন্সিলের মেয়র নাসিম আলী ওবিই।

মূল বক্তব্যে ভ্যালেরি বলেন, ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা বাংলাদেশে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী তৈরিতেও কাজ করছে। প্রতিবন্ধকতা ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছে সিআরপি। শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সিআরপি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে সিআরপি।

ভ্যালেরি টেইলর সিআরপি সেন্টার পরিদর্শন করার কথা উল্লেখ করেন এবং সংস্থার কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সিআরপি কার্যক্রম সম্পর্কে ভিডিও ক্লিপ উপস্থিত অতিথিদের দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কেমডেন কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর নাসিম আলী ওবিই বলেন, ভ্যালেরি ও সিআরপি কার্যক্রম সম্পর্কে আমি অবগত। বাংলাদেশের অসহায় ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তাদের এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। মেয়র সিআরপিকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, ভ্যালেরি অ্যান টেইলর, ওবিই-র জন্ম ১৯৪৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তিনি মূলত ইংল্যান্ডের নাগরিক। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সম্মানপূর্বক এই নাগরিকত্ব দেন। স্বেচ্ছাসেবা এবং সম্পূর্ণ আপন প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিশ্বে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চিকিৎসা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।

বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও সিআরপিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নামিদামি ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ভ্যালেরি টেইলর ট্রাস্ট ইউকে।

বাংলাদেশে ঢাকার সাভারে পূর্ণাঙ্গ সেন্টারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরো ১৪টি সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি চিকিৎসায় সিআরপি উপমহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতাল।

সচেতনতামূলক সভায় সংস্থাটিকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কেবিন ক্রু সমাজকর্মী সাব্বির করিম। ভ্যালরি টেইলর ট্রাস্ট ইউকের ট্রাস্টি মুক্তার হোসেন খোকন ট্রাস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। নাহিন শাহ এবং নাবিলা খালেদ সিআরপি সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই ট্রাস্টটের সদস্য হতে আগ্রহী হয়ে সদস্য ফরম সংগ্রহ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক অ্যাকাউন্টেট লাকি আক্তার, বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল মুকিত, তালেব আলী, মইনুল হোসেন, ট্রাস্টের ট্রেজারার সাইদূল খালেদ। অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিল ভ্যালরি টেইলর ট্রাস্ট ইউকে।

জেডএস