ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে পৃথিবীর কোথাও কোনো অভিযোগ ওঠেনি। সেরামের কোভিশিল্ড টিকাটিই কানাডার নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে কানাডার সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা দেশটির নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছেন। বাংলাদেশ এবং কানাডা একই টিকা দিচ্ছে। ফলে টিকা নিয়ে কারো মনেই কোনো ধরনের সংশয় থাকা উচিৎ নয়।
 
কানাডার দুই বিশেষজ্ঞ এই মতামত দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর টিকা কতোটা কাজ করছে তার সমীক্ষা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, ন্যূনতম বিজ্ঞান চর্চার সক্ষমতা আছে এমন প্রতিটি দেশই কোভিডের টিকা দেওয়ার পর তার কার্যকারিতা নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। 

কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় টরন্টো থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ ‘করোনার টিকা নিয়ে যতো প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনায় এ মতামত দেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্যাথোলোজি ও ল্যাবরেটরি মেডেসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক এবং বৃটিশ কলম্বিয়া সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির জুনোটিক ও ইমার্জিং প্যাথোজেন প্রোগ্রামের প্রধান ড. মোহাম্মদ মোর্শেদ এবং মন্ট্রিয়লভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. শোয়েব সাঈদ। 

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কারণ এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলমান বিতর্কের বিভিন্ন দিকে নিয়ে এই দুই বিজ্ঞানী পর্যালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন। 

ড. মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, করোনার টিকা দেওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এ জন্য অবশ্যই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কারণে রক্ত জমাট বাঁধছে- এমন একটি তথ্যের ভিত্তিতে এই টিকা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্লাড কটের সাথে টিকার কোনো সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ব্লাড কট বা রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনাটি নতুন কিছু নয়। ধূমপান, শারীরিক স্থূলতা, জীবনযাপন প্রক্রিয়া এবং নানা ধরনের অসুস্থতার কারণেই মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। সারা বিশ্বে কোটি কোটি লোককে টিকা দেওয়া হয়েছে। বরা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৩৭ জনের রক্ত জমাট বেঁধেছে। তাও আবার টিকার কারণেই যে হয়েছে সেটা নিশ্চিত নয়। 

সাম্প্রতিক এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, গবেষণার তথ্য হচ্ছে নানাবিধ অসুস্থতাজনিত কারণে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ৭৫০- ৭৯০ জনের ব্লাড ক্লট হয়। কাজেই টিকা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। 

অণুজীব বিজ্ঞানী ড. শোয়েব সাঈদ টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়া তার পরিচিত কয়েকজনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, টিকা নেওয়ার নির্দিষ্ট একটা সময় পর মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। কিন্তু টিকা দেওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঢিলেঢালা জীবনযাপন শুরু করলে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 
টিকা নাগরিকদের মধ্যে কতোটা কাজ করছে তা নিরীক্ষা করতে ড. মোর্শেদের প্রস্তাবকে সমর্থন করে ড. শোয়েব সাঈদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা দরকার। এই ক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্যের কিটটি ব্যবহার করা যেতো।  

বাংলাদেশে টিকা দেওয়ার আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,বাংলাদেশের কোভিডের টিকা এখনো সমাজে নানা বিবেচনায় অগ্রসর মানুষের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সেই অর্থে টিকা নিয়ে যাওয়া যায়নি। নানাবিধ অ্যাপসের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার নিবন্ধন পদ্ধতি প্রান্তিক মানুষকে টিকা থেকে দূরে রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

এনএফ