হালাল খাবার গ্রহণে কোরআনের নির্দেশনা
প্রতীকী ছবি
পানহার মানুষের একান্ত প্রাকৃতিক প্রয়োজন। পানাহার ছাড়া সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর ইবাদতের জন্য শরীরে শক্তির প্রয়োজন হয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে প্রয়োজন মাফিক খাবারের নির্দেশ দিয়েছেন।
বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। -(সুরা আরাফ, ৩১)
বিজ্ঞাপন
খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা হালাল হারাম বাছ-বিছারের নির্দেশনা দিয়েছেন। একজন মুমিনের পবিত্র জীবনযাপনের জন্য হালাল খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের হালাল ও পবিত্র যে রিজিক (জীবনোপকরণ) দান করেছেন, তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো। (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১৪)
পবিত্র কোরআনে হালাল ও পবিত্র রিজিক গ্রহণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য যাবতীয় খরচ নিখুঁত, পবিত্র, সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে।
বিজ্ঞাপন
ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখসহ সব মানুষকে হালাল খাবার গ্রহণ এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রত্যেক নবীর প্রতিও বৈধভাবে উপার্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো।’ -(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
অতঃপর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭২)।
অবৈধভাবে উপার্জিত খাবার খেয়ে যে ইবাদত করা হয় তার সওয়াব পাওয়া যায় না। ওই ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাতেও যাওয়া যাবে না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উত্পন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ -(ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর : ১৭২৩, তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)
প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে হালাল জীবিকা উপার্জনের বিকল্প নেই। হালাল পথে উপার্জিত জীবিকা ভক্ষণে মানুষের স্বভাব-চরিত্র সুন্দর হয়। মানুষের মধ্যে সৎ সাহস ও সত্যানুরাগ জন্মে।
অন্যদিকে হারাম উপার্জন মানুষের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এটি নৈতিক অধঃপতনের প্রেরণা জোগায় ও বিপথগামী হতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করা মুসলমানের ফরজ দায়িত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম ফরজ। ’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৯৯৯৩)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?! -(মুসলিম ১০১৫)
হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।’ (জামিউল আখবার: ৩৯০)। ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।’ -(জামিউল আখবার: ১০৮৫)।
এনটি