ছবি: সংগৃহীত

ওয়ানডে ক্রিকেটের অনেকগুলো ‘প্রথম’ ছিলো তার দখলে। প্রথম চার, প্রথম অর্ধশতক, দল ইংল্যান্ড হারলেও প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছিল জন এডরিচের হাতে। সেই কিংবদন্তি ইংলিশ ব্যাটসম্যান ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে ৮৩ বছর বয়সে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। 

২০২০ এ চলে গেলেও ব্যক্তিগত ডাক্তার সেই ২০০০ সালে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সাত বছর। শরীরে বাসা বেঁধেছিল মরণব্যাধি ক্যান্সার। ডাক্তারের পূর্বানুমানকে মিথ্যে প্রমাণ করে আরও এক যুগ বেঁচে ছিলেন এডরিচ, ঠিক যেমন প্রথম ওয়ানডেতে সামলেছিলেন অ্যাশলি মালেট, গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি, অ্যালান থমসনদের বোলিং তোপ! লড়াকু মানসিকতাটা যে ছিলো তার রক্তেই!

১৯৭০ এর ৫ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচে ১১৯ বলে এডরিচ করেছিলেন ৮২ রান, ইতিহাসের প্রথম চার, প্রথম অর্ধশতকের কীর্তিটাও গড়া হয়ে গিয়েছিল তাতে। তবে দল গুটিয়ে গিয়েছিলো মাত্র ১৯০ রানে, যা স্বাগতিক অজিরা তাড়া করে ফেলে মাত্র ৩৬ ওভারেই। তাতে অবশ্য ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তার হাতে ওঠা থেকে বিরত থাকেনি। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ সেরা হওয়ার কীর্তি গড়েন এডরিচ।

সে মৌসুমটাই অবশ্য দারুণ যাচ্ছিল তার। অধিনায়ক রে ইলিংওয়ার্থের অধীনে ১৯৭০-৭১ অ্যাশেজে ৭২ গড়ে করেছিলেন ৬৪৮ রান, শতক ছিলো দুটো। তাতে ইংল্যান্ডও সিরিজটা জেতে ২-০ ব্যবধানে। তবে ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংসটা খেলেছিলেন অভিষেকের দুই বছর পর। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৬৫ সালে খেলেছিলেন ৩১০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।  

ক্যারিয়ারের শুরু আর শেষ, দুটোতেই জড়িয়ে আছে ম্যানচেস্টারের নাম। ১৯৬৩ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল ইংলিশ এই ব্যাটসম্যানের। ১৩ বছর পর যখন বিদায়ী ম্যাচটা খেলতে নামবেন, প্রতিপক্ষ ছিলো একই, মাঠটাও! তার মাঝের ক্যারিয়ারটা বেশ ঈর্ষণীয়, ৪৩.৫৪ গড়ে ১২ টি শতক ও ২৪ অর্ধশতকে রান করেছিলেন ৫১৩৮।

অধিনায়কত্বের স্বাদও পেয়েছিলেন এডরিচ, হোক তা এক ম্যাচের জন্যেই। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে অ্যাশেজ সিরিজে এক টেস্টের জন্য ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে সে সিরিজটাকে এডরিচের লড়াকু মানসিকতার উদাহরণ হিসেবেও টানা যায়। তরুণ ডেনিস লিলির এক বাউন্সারে সেবার পাঁজরের হাড় ভাঙে তার, তবু খেলা থামেনি। চালিয়ে গিয়েছিলেন ব্যাটিং। ২২ বছরের কাউন্টি ক্যারিয়ারে করেছেন ৪০০০০ রান, আছে ১০৩ টি শতক।

১৯৭৬ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেও ক্রিকেট ছাড়েননি এডরিচ। কাউন্টি দল সারের সভাপতিত্ব করেছেন, ছিলেন ইংল্যান্ডের নির্বাচক ও ব্যাটিং কোচও। তাই তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ইংল্যান্ড বোর্ড। কিংবদন্তি ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যার ইয়ান বোথামও শোক জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘বড় দিনে এ এক দুঃখের সংবাদ। জন এডরিচ আর নেই। অসাধারণ এক মানুষ ছিলেন তিনি, যার সান্নিধ্যে ভালো কিছু সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল!’

এনইউ