বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে লয়েডের চিঠি
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরিচিত এক দল নিয়েই তিন ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই দলের অনেকেরই এখনো অভিষেকও হয়নি। বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামবেন তারা।
এই দলটা নিয়ে আশা তাই কম। তবে ক্যারিবীয় তরুণরা যে অনুপ্রেরণা পেলেন, তা তো বিশেষ কিছুই। স্বয়ং কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড চিঠি লিখে অনুপ্রেরণা জানিয়েছেন তাদের। ১৯৬৬ সালের ভারত সফরের প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে আঙুলের চোটে পড়েন সিমুর নার্স। অপ্রত্যাশিতভাবে নার্সের জায়গায় টেস্টে অভিষেক হয় লয়েডের।
বিজ্ঞাপন
অভিষেকেই বাজিমাত করেন লয়েড। দুই ইনিংসে ৮২ ও অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন। তাতে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। হঠাৎ পাওয়া সুযোগকে দারুণভাবে কাজে লাগানোর গল্প শুনিয়েছেন ক্লাইভ লয়েড। তার পাঠানো চিঠি ক্রিকেটারদের কাছে পাঠিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান রিকি স্কেরিট।
লয়েডের চিঠি...
বিজ্ঞাপন
প্রিয় ছেলেরা,
আমি বুঝতে পারছি, এমন একটা সফর তোমরা শুরু করতে যাচ্ছো, যার জন্য তোমরা হয়তো প্রস্তুত নও। সম্ভবত তোমাদের মনে হতে পারে, কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার সবাই এটাও আশা করছে যে, তোমরা লড়াই করবে এবং ফল এনে দেবে।
তোমাদের বিষয়টা এমনভাবে নেওয়া উচিত যে, এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে শূন্যস্থান পূরণের ব্যাপার নয়, বরং নিজেদের জায়গা পাকা করার সুযোগ। যোগ্যতার ভিত্তিতেই তোমরা সুযোগ পেয়েছ। এটাই নিয়তি। এটাই তোমাদের সুযোগ। বিশ্বকে নিজের প্রতিভা, দক্ষতা দেখানোর চমৎকার এক উপায়। সবাইকে দেখানোর সুযোগ যে, তোমরা দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটার নও। তোমরাও শীর্ষ সারিতে উঠে আসতে পারো।
১৯৬৬ সালে আমি মূল টেস্ট দলে ছিলাম না। অপ্রত্যাশিতভাবে, সিমুর নার্স চোট পায় আর প্রথম টেস্ট শুরুর ৪৫ মিনিট আগে আমাকে জানানো হয় যে, আমি খেলছি। এরপর টানা ৩৫ টেস্ট খেলেছিলাম। কারণ, আমি ভালো করেছিলাম। আমরা সিরিজ জিতেছিলাম। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম যে নিজের প্রতিভা ও সামর্থ্য দেখানোর এটাই সুযোগ। আর সেটা আমি দুই হাতে কাজে লাগিয়েছিলাম। এর চেয়েও বড় কথা, আমাদের অঞ্চলের যে কারোর জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খেলতে পারা সবচেয়ে বড় সম্মানের। আমি সেই সময়েও তা বিশ্বাস করতাম, এখনও করি।
তোমরা যে দলে ডাক পাওয়ার উপযুক্ত, এটা প্রমাণের সুযোগ তোমাদের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি ও ক্যাপ পরতে পারার জন্য তোমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। তোমরা অন্যতম সেরা ক্রিকেট জাতির প্রতিনিধিত্ব করছ, যাদের রয়েছে ঈর্ষণীয় রেকর্ড আর তা নিয়ে আমরা গর্বিত। মনে রেখো, আমরা কেবল ৫০ লাখের একটু বেশি জনসংখ্যার এক জাতি।
আমাদের রেকর্ডের একটি, টানা ২৯ ম্যাচ ধরে অপরাজিত। টানা ১১ জয়। টানা ১৭ বছর ধরে হারিনি একটি টেস্টও।
এগুলো অতীতের কীর্তি ও অর্জনের স্রেফ ক্ষুদ্র একটি অংশ। যা অর্জনের পেছনে কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদন লুকিয়ে আছে…সবার আগে, আমি তোমাদের নিজেদের ফিটনেসের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে বলব। ব্যাটসম্যান বা বোলার যাই হও, সবসময় নিজের টেকনিক ও স্কিল গড়ার চেষ্টা করবে। আমার দল ঠিক এটাই করেছিল এবং আমার বিশ্বাস, তোমরাও তাই করবে।
তোমাদের সামনে আমাদের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি এবং আমাদের ক্রিকেটে গর্ব করার মতো আরও কিছু যোগ করার সুযোগ। এই প্রত্যাশা কেবল আমার নয়, পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। তোমাদের জয় ওদেরও জয় হবে।
তোমাদের কাছে বাংলাদেশ সফর ভীতিকর মনে হতে পারে। তবে তা অসাধ্য নয়। এটা আদর্শ একটি সুযোগ। বিচক্ষণ (টেস্ট) অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অধীনে তোমরা নিজেদের নিবেদন, পেশাদারিত্ব, তারুণ্য ও জয়ের বাসনা দিয়ে নতুন একটি যুগের সূচনা করতে পারো। তোমাদের যা বলছি তা কোনো অমূলক জল্পনা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। যখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দায়িত্ব নিই এর আগে আমরা বিশের বেশি টেস্ট হেরেছিলাম। নতুন করে লক্ষ্য স্থির করা ও দল পুনর্গঠনের প্রয়োজন ছিল। আমার দলেও অনেক নতুন ক্রিকেটার ছিল, সংখ্যাটা হয়তো এখন তোমরা যেমন আছো তেমনই হবে। কিন্তু আমার দল চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত আমরা চূড়ায় উঠেছিলাম। আমার বিশ্বাস, তোমরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারবে। আমরা করতে পেরেছিলাম কারণ, নিজেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। তোমরাও পারবে। আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের প্রথম ধাপ।
তোমাদের একটা কথা মনে করিয়ে দিই, সাফল্যের চূড়ায় উঠতে হলে সেই মানসিকতা থাকতে হবে। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে যেতে পারবে। আমি নিশ্চিত, এই সফরে তোমরা তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।
শেষে বলি, সাফল্য কাজের আগে আসে কেবল অভিধানে। তোমাদের জন্য আমার শুভকামনা। মনে রেখো, বেশিরভাগ মানুষকে বিচার করা হয় তারা যে বাধা পেরিয়ে এসেছে তার ভিত্তিতে।
এমএইচ