হিন্দি কিংবা বাংলা সিরিয়ালের মতো মনে হচ্ছে চারপাশ। যে যেভাবে পারছে, মন্তব্য করে যাচ্ছে! কেউ পরামর্শ দিচ্ছে, কেউ সমালোচনা করছে। আবার কেউ এমন কিছু করছেন যে মনে হচ্ছে সার্কাসের রিং মাস্টার তিনি! এমন ছন্নছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট আর কখনো দেখা গেছে কি না সন্দেহ। দুঃসময় এসেছে, সমালোচনার ঝড়ও ছিল। কিন্তু এবার যেসব কাণ্ডকারখানা দেখা যাচ্ছে সব যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

ওমানে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সময় যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন, তা এখন রীতিমতো অগ্নিকুণ্ড! কখনো সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, কখনো সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকুর রহিম। শেষটাতে এসে সাকিব পত্মী উম্মে আহমেদ শিশিরও যোগ দেওয়ায় এটি যেন হয়ে গেছে মেগা সিরিয়াল। মাঠের ক্রিকেট নিস্প্রভ হলেও উত্তাল অন্তর্জাল, ফেসবুক, টুইটার।

এসবের ভেতরই আজ শুক্রবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল। হেরে গেলে সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে যাবে। ম্যাচটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটায়)। যেটি ক্যারিবীয়দের জন্যও টিকে থাকার লড়াই।
 
কিন্তু এমন একটা ম্যাচ খেলার আগে কী হচ্ছে তার চেয়ে বরং বলা উচিত কী হচ্ছে না! মাঠের বাইরে সরব সবাই। শ্রীলঙ্কার পর ইংল্যান্ডের কাছেও হেরে দল যখন বিপাকে তখন কি না চোখ বন্ধ করে শুধু খেলায় মন দেওয়ারও সুযোগ নেই। আর মাহমুদউল্লাহদের কোন সিদ্ধান্ত যৌক্তিকও হয়ে উঠছে না। 

এই যেমন ম্যাচের আগের দিন, হঠাৎ করেই দল অনুশীলন বাতিল করল। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আছেন দুবাইয়ের ফেস্টিভাল সিটির ক্রাউন প্লাজা হোটেলে। যেখান থেকে শারজাহর মাঠ মিনিট পঁচিশের পথ, অথচ সেখানেই কি না ট্র্যাফিক জ্যামের অজুহাতে গেল না দল!

টানা দুই ম্যাচ হেরে জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্রিকেটীয় আলোচনাটা কোথায় যেন দূরে সেরে গেছে। ম্যাচ প্রিভিউতেও মাঠের বাইরের সেই উত্তেজনারই খবর। মাঠের বাইরে অনেক রকম ঘটনা ঘটছে, অনেকেই বলছেন বাইরে এই যে সমালোচনার ঝড় তার জন্য চাপে আছে বাংলাদেশ দল। ক্যারিবীয় পরীক্ষার আগে কতোটা চাপে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা?

এই প্রশ্নের মুখে বৃহস্পতিবার পড়লেন নুরুল হাসান সোহান। জাতীয় দলের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বলছিলেন, ‘আমরা যখন খারাপ করি, আমাদের সমালোচনা সব সময়ই হয়। আমরাও এটা মনে করি যে সমালোচনা হবে। গঠনমূলক সমালোচনা হওয়াটাও জরুরি। হয়তো আমরা খারাপ করছি। এটা মেনে নিতেই হবে। অনেকবারই এমন হয়েছে যে আমরা খারাপ সময়ে ছিলাম, যেখান থেকে আমরা আবার নিজেরাই ফিরে এসেছি। আমার কাছে মনে হয় এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপে আরও তিনটা ম্যাচ, এখানে ভালো করতে পারলে ব্যাপারটা ইতিবাচকভাবেই আসবে।’

একটা জয়ই আসলে পাল্টে দিতে পারে এই টালমাটাল পরিবেশ। একইসঙ্গে টিকে থাকবে সেমি ফাইনালের আশাও। দল কী সেমির স্বপ্ন দেখে এখনো? সোহান বলছিলেন, ‘আমাদের টিকে থাকতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। সবার মনোযোগ এই ম্যাচ নিয়েই। ইনশাআল্লাহ্‌ কাল যদি ভালোভাবে শুরু এবং শেষ করতে পারি তাহলে হয়তো পরের ম্যাচগুলো সহজ হয়ে যাবে এবং পুরো দল চাঙ্গা হয়ে যাবে। দুই ম্যাচ হেরে অবশ্যই আমরা টুর্নামেন্টে ব্যাকফুটে আছি। বাংলাদেশে থাকতে অনেকেই বলেছি আমাদের আশা সেমিফাইনাল খেলা। জিতলে সেমিতে খেলার আশা টিকে থাকবে।’

কিন্তু জয় তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়! উইন্ডিজ মরন কামড় বসাবে সন্দেহ নেই। টানা দুই ম্যাচ হেরে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা কোণঠাসা। নিকোলাস পুরান জানিয়ে রাখলেন, জয় ছাড়া অন্য ভাবনা মাথাতেই নেই তাদের। উইন্ডিজের এই ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘দল হিসেবে আগ্রাসী হতে চাই আমরা। শুক্রবার যখন আমরা মাঠে যাব, পিচ ও কন্ডিশন দেখব, তখন আমরা খেলার একটা পরিকল্পনা সাজাব। যত দ্রুত সম্ভব একটা খুব ভালো সংগ্রহ গড়তে চাইব।’

জানিয়ে রাখলেন শারজাহর মাঠ যেহেতু ছোট, সেটির ফায়দাও নিতে চাইবেন তারা। নিকোলাস পুরান বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের স্কিল কাজে লাগাতে চাই। যখন সেটি করতে পারব, তখন এমনিতেই ফল আসবে। ছোট বাউন্ডারি বলেই ছক্কা মারতে যাচ্ছি, এটা অবশ্য বলবো না।’

২০ ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যতো শক্তিশালীই হোক, হেড টু হেড কিন্তু মন্দ নয় বাংলাদেশের। দুই দল টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে মোট ১২ বার। যেখানে ক্যারিবীয়রা জিতেছে ৬টিতে। বাংলাদেশের জয় ৫ ম্যাচে। এবার জিতে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছুঁয়ে ফেলবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তলানিতে থাকা আত্মবিশ্বাসের পারদটাও বেশ উপরে উঠবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের।

নুরুল হাসান সোহান যেমন বলেছেন, ‘দেখুন, টি-টোয়েন্টিতে ছোট বা বড় দল বলে কিছু নেই। যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। আমরা খারাপ সময় এলে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারি। এখন আমরা একটা ম্যাচ জেতার জন্য অপেক্ষা করছি।’ শুধু সোহান কিংবা মাহমুদউল্লাহরাই নন, গোটা বাংলাদেশ একটা জয়ের প্রতীক্ষায়। অনেক হয়েছে মাঠের বাইরের অক্রিকেটীয় আলোচনা।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে স্পিনার নাসুম আহমেদ অদ্ভূদ সরলতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের দ্বারা হচ্ছে না!’ এবার হোক, আর শারজাহর ঢেউ আছড়ে পড়ুক ছোট্ট বদ্বীপে, হেসে উঠুক গোটা বাংলাদেশ!

এটি/এমইচ