জয়া চাকমা/ফাইল ছবি

জয়া চাকমা একটু একটু করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। বছর দুই আগে বাংলাদেশের প্রথম নারী ফিফা রেফারি হয়েছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ফুটবল কোচ হিসেবে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি এখন চালিয়ে যাচ্ছেন উচ্চ শিক্ষা। 

ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অব ফিজিক্যাল এডুকেশনে নিচ্ছেন উচ্চতর ডিগ্রি। দু’বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রামের ইতোমধ্যে মাত্র এক সেমিস্টার শেষ হয়েছে। সেমিস্টারের বিরতিতে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছেন। অসুস্থ মায়ের পাশে রাঙামাটিতে কয়েক দিন কাটিয়ে ১১ মার্চ আবার ভারতের জন্য বিমান ধরবেন।

দেশে শিক্ষিত ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কম, এর চেয়েও অনেক কম উচ্চ শিক্ষিত ক্রীড়াবিদ। জয়া এক্ষেত্রে ভিন্ন পথের যাত্রী। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার, দেশের প্রথম ফিফা রেফারি, বিকেএসপির নারী ফুটবল দলের কোচ, ভারতের সুব্রত কাপে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ এত কিছুর পরেও উচ্চ শিক্ষা প্রয়োজন মনে করেন জয়া, ‘আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ইতিহাসে। যেহেতু ক্রীড়া নিয়ে কাজ করব। এজন্য ক্রীড়া বিষয়ক উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন রয়েছে। দেশ থেকে একটি বিএড ডিগ্রি নিয়েছি, এখন মাস্টার্স করছি ভারত থেকে।’

জয়া চাকমা রাঙমাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। রেফারিংয়ে ফিফা ব্যাজধারী তিনি। পড়াশোনা নিয়েও তার স্বপ্ন অনেক। 

আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্ন পূরণের জন্য ছুটে চলি। ভারতে এখন মাস্টার্স ডিগ্রি করছি। ইচ্ছে আছে ইউরোপ-আমেরিকায় ক্রীড়ার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি করার। বাংলাদেশে ক্রীড়া সেক্টর বড় হচ্ছে। আমরা যদি উচ্চ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত না হই তাহলে একটি সুন্দর ক্রীড়া পরিবেশ কীভাবে তৈরি করব। সেই লক্ষ্যেই আমার এই জ্ঞানার্জন।

জয়া চাকমা, সাবেক ফুটবলার, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

২০১৬ সালে বিকেএসপিতে ফুটবল কোচ হিসেবে যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যে কোচিংয়ে এএফসি বি লাইসেন্স ডিগ্রি নিয়েছেন জয়া। কোচিংটা তার পেশা হলেও নেশার জায়গাটা রেফারিং। রেফারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। ফিফা রেফারি হওয়ার পথটা খুব মসৃণ ছিল না তার, ‘২০১৭ ও ১৮ টানা দুইবার ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হই। খুব দমে পড়েছিলাম। বয়স হয়ে যাচ্ছে, বিকেএসপির কোচিংয়ের চাপ। সব মিলিয়ে আর হয়তো হবে না। কিছুদিন খারাপ লাগার পর সিদ্ধান্ত নেই আমার তো জব আছেই, চেষ্টা চালিয়ে যাব যতদিন না পারি।’ এই দৃঢ় প্রত্যয়ের পরের বছরেই ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হন জয়া। নাম লেখান প্রথম নারী ফুটবল রেফারি হিসেবে। জয়ার আগে দক্ষিণ এশিয়ার আর মাত্র চারজন নারীর এই কৃতিত্ব রয়েছে। 

আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচেও রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন জয়া/ফাইল ছবি

পেশা কোচিং, নেশা রেফারিং-এই দুইটির মধ্যে সমন্বয় করেন জয়া এভাবে, ‘রেফারি হওয়ায় খেলোয়াড়দের সাইকোলজি, ভুলসহ সবকিছু কাছ থেকে দেখতে পারি। সেগুলো আমার শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দিতে পারি কোচিংয়ে। আবার আমার শিক্ষার্থীরা যেন ফুটবলের আইন-কানুন ভালো জানে , রেফারির নির্দেশনা মানে সেগুলোও বলতে পারি। রেফারিং ও কোচিং একটা অন্যের পরিপূরক।’ রেফারিং ও কোচিং উভয় ক্ষেত্রে স্থায়িত্বের জন্য উচ্চ শিক্ষাকে হাতিয়ার মনে করেন জয়া, ‘একজন ফুটবলার যেখানে আট কিলোমিটার দৌড়ান একটা ম্যাচে সেখানে রেফারিদের দৌড়াতে হয় বারো কিলোমিটারের কাছাকাছি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা কমবে। কোচিংয়ে দৌড়াদৌড়ির বিষয় রয়েছে। একাডেমিক জ্ঞান থাকলে তখন কোচিং এডুকেশন, রেফারি ইন্সট্রাকটর হয়ে দেশের ফুটবলকে আরো বেশি সেবা দেওয়া যাবে।’

রাঙামাটির গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন নারী বদলে দিতে যান সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও, ‘রাঙামাটির একটি গ্রাম থেকে আমি যদি পারি, তাহলে অন্যরাও পারবে। একজন জয়াকে দেখে আরো অসংখ্য জয়া উঠে আসবে, তখনই হবে আমার সার্থকতা।’

যত অর্জন জয়ার

  •  জাতীয় নারী ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার
  •  দেশের প্রথম নারী ফিফা রেফারি
  •  বিকেএসপির ফুটবল কোচ হিসেবে ভারতের সুব্রত কাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়
  •  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ( ব্যাচের রাণী নির্বাচিত)
  •  আইসিসিআর স্কলারশিপে বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশনে মাস্টার্স অধ্যয়ন
  •  ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ১০০ তরুণ প্রতিনিধি দলের একজন হয়ে ভারতে সরকারি সফর
  •  অপরাজিতা পদক