ডেনমার্কের দ্বিতীয় গোলটা আসে ডলবার্গের পা থেকে/টুইটার

নিজেদের প্রথম ম্যাচ, ইউরোর মোটে দ্বিতীয়। সেদিনই বড় এক ধাক্কা খেয়েছিল ডেনমার্ক। হারিয়েছিল নিজেদের প্রাণভোমরা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে, একেবারেই যে হারায়নি তাতেই তো সন্তুষ্ট হওয়ার কথা দলটির। সেই ডেনমার্ক শেষ চার নিশ্চিত করবে, গত ১২ জুন এ কথা বললে বিশ্বাস করতেন আপনি? সে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটাই ঘটিয়ে দিয়েছে ড্যানিশরা। শেষ আটে তৃতীয় লড়াইয়ে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনাল। রূপকথার আরও একটু কাছেও চলে এসেছে দলটি।

ইউরোয় ড্যানিশদের শুরুর ম্যাচে মাঠেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন এরিকসেন। এরপর থেকেই যেন তিনি না থেকেও আছেন ডেনমার্কের সঙ্গে। ম্যাচে প্রতিপক্ষ সম্মান দেখাচ্ছে তাকে, তার দল ডেনমার্ক তো শুরুর আগে তার জার্সিই বড় করে তুলে ধরছে স্টেডিয়ামে।

সেই ধারা এদিনও ধরে রেখেছিল ডেনমার্ক। টুর্নামেন্টের রীতি অনুসারে ম্যাচের আগে দুই দলের বিশাল ডামি জার্সি নামানো হয় মাঠে। সেটায় এরিকসেনের নাম লিখে।

দলের মননেও কি নেই এরিকসেন? টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই যে ছিঁড়েখুঁড়ে দেওয়ার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা ড্যানিশদের, সেটা তার অনুপ্রেরণা না হলে কী?

সে প্রবল পরাক্রমশালী মানসিকতা এদিনও ছিল ডেনমার্কের। গোলদুটো পেয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই। তবে মুড়িমুড়কির মতো সুযোগ নষ্ট না করলে বিরতির আগেই কমপক্ষে তিন চার গোল বাগিয়ে নেওয়াও অসম্ভব ছিল না ড্যানিশদের। একেবারে শুরুর দিকে থমাস ডেলানির গোল এগিয়ে দেয় দলটিকে। সেই থেকে মুহুর্মুহু আক্রমণের শুরু।

এর কিছু পরে নিজের দ্বিতীয় গোলটা পেতে পেতে পাননি ডেলানি। ডানপাশ থেকে লারসেনের ক্রস তাকে এনে দিয়েছিল দারুণ সুযোগ, কিন্তু তার শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। 

২২ মিনিটে গোল হজম করেই বসেছিল ডেনমার্ক। গোলরক্ষক কেসপার স্মেইকেল পাস তুলে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের পায়েই! পরে অবশ্য রক্ষাও করেন সেই স্মেইকেলই। তার পাসটা পেয়ে লুকাস মাসোপাস্ট স্কয়ার করেন টমাস হলসকে। তার চেষ্টা দারুণ দক্ষতায় সামলে নেন ড্যানিশ গোলরক্ষক। 

এক গোলের লিড ছুটে যেতে পারে যে কোনো সময়ে। তাই ব্যবধানটা বাড়ানো জরুরী ছিল। সে গোলটাও ড্যানিশরা পেল ৪২ মিনিটে। জোয়াকিম মায়েহলের ক্রস বার্সেলোনা স্ট্রাইকার মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের নাগালের বাইরে দিয়ে গেলেও ক্যাসপার ডলবার্গ প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক থমাস ভাচলিককে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই তা ঠুকে দেন চেকদের জালে। বিরতির আগে আরও একটা আক্রমণে উঠেছিল ড্যানিশরা। কিন্তু ডেলানির জোরালো শট ঠেকিয়ে চেকদের আরও পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচান ভাচলিক। ফলে বিরতির আগে দুই গোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ড্যানিশদের।

চলতি ইউরো ২০২০ নকআউট দারুণ সব রোমাঞ্চ উপহার দিয়েছে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও পরের পর্বে যাওয়ার কীর্তিও আছে তাতে। চেকরাও বিশ্বাস হারায়নি। দারুণ সব আক্রমণে বিরতির পর নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছিল ড্যানিশদের। ৪৯ মিনিটে এল সে বিশ্বাসটা আরও বাড়িয়ে দেওয়া গোলটা। চলতি ইউরোয় যিনি রোশনাই ছড়িয়েছেন প্রায় সব ফরোয়ার্ডের চেয়ে বেশি, সেই প্যাট্রিক শিক করেন গোলটি। ভ্লাদিমির কুফালের ক্রস থেকে দারুণ এক ফিনিশে গোল করে চেকদের বিশ্বাসকে এক লহমায় আকাশে তুলে দিয়েছিলেন সাবেক রোমা স্ট্রাইকার।

সেই বিশ্বাসের বলেই কিনা, পরে অন্তত ১০ মিনিট ড্যানিশদের রীতিমতো ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল চেকরা। মনে হচ্ছিল সমতাসূচক গোলটা এই এল বলে! কিন্তু যেন কোচ ক্যাসপার হিউলমান্ডের মাথায় খেলে গেল, সেরা রক্ষণের উপায় তো হচ্ছে আক্রমণই। করলেন দুটো আক্রমণাত্মক বদলি। পরিস্থিতি গেল বদলে। ড্যামসগার্ডের বদলে মাঠে আসেন নরগার্ড, আর গোলদাতা ডলবার্গের জায়গাটা নেন ইউসুফ পলসেন। তাতে আক্রমণের ধারটা বাড়ে ডেনমার্কের, কমে আসে রক্ষণের ওপর চাপও। পলসেন দুটো সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট না করলে ব্যবধানটা আরও বড় হতেই পারত দলটার।

চেকরাও একেবারে ছেড়ে দেয়নি আশা। আক্রমণ শানিয়েছে শেষ পর্যন্ত। শেষ বাঁশির ঠিক আগে যদি থমাস সুচেকের ক্রসে কেউ পা ছোঁয়াতে পারতেন, তাহলে আরও একটা ম্যাচ গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু তা হয়নি, তাই ২-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ চারে উঠে যায় ডেনমার্ক।

সেখানে তাদের লড়াইটা হবে ওয়েম্বলিতে। আগামী ৮ জুলাই রাতের সেই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ইউক্রেন বা ইংল্যান্ডের কেউ।

এনইউ