ছবি : সংগৃহীত

রেফারি জালালউদ্দিন ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজালেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম তাতে মূহুর্তে রুপ নেয় লাল উৎসবে। মোহামেডান গ্যালারি যেন ক্ষনিকের জন্য হয়ে যায় ‘বসুন্ধরা কিংসের’। সমর্থকদের স্লোগান ‘কিংস আর চ্যাম্পিয়ন’। ফুটবলাররাও করোনার মধ্যেই সমর্থকদের ভালোবাসার উষ্ণতা পেতে গ্যালারির কাছে যান। কোচ অস্কার ব্রুজনকে নিয়েই হলো উল্লাস।

বসুন্ধরা কিংসের আজন্টোইন ফর্রোয়াড রাউল অস্কারের গোল সাইফের স্বপ্ন ভঙ্গ করে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলে মাত্র ০-১ গোলে হেরে সাইফ স্পোর্টিংয়ের ডাগ আউটে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। বেলজিয়ান কোচ পল পুট অত্যন্ত অভিজ্ঞ। আফ্রিকান নেশন্স কাপের ফাইনালে কোচিং করানো অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ফুটবলারদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেন তিনি।

বসুন্ধরা এই নিয়ে টানা তিনবার ফাইনাল খেলছে, যেখানে শেষ দুই বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। কাগজ-কলমে কিছুটা দুর্বল সাইফ স্পোর্টিং প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে দারুণ প্রতদ্বন্দ্বিতা করেছে। জমাট রক্ষণ রেখে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলে বসুন্ধরাকে ভালোই বিপদে ফেলেছিল কয়েকবার। কিন্তু বসুন্ধরার ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা ও হাই কোয়ালেটির জন্য সাইফ স্পোর্টিং সফল হতে পারেনি। 

সাইফের সামনে প্রাচীর হয়েছিলেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা নাইজেরিয়ান কনতে কয়কবার বক্সের আশেপাশে থেকে দুর্দান্ত শট নিয়েছেন। তবে সেগুলো বেশ দক্ষতার সঙ্গেই ঠেকিয়েছেন জিকো।

সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসনও যথেষ্ট ভালো সেভ করেছেন। কিন্তু ৫২ মিনিটে বসুন্ধরার আর্জেন্টাইন রাউলের কোনাকুনি শটে পরাজিত হন তিনি। ব্রাজিলিয়ান রবসনের বাড়ানো বলে বক্সের মধ্যে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনাকুনি শটে পাপ্পুকে পরাজিত করেন। 

পিছিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর সাইফ কোচ কৌশলে খানিকটা পরিবর্তন আনেন। কাউন্টারের পরিবর্তে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলানো শুরু করেন। বসুন্ধরা ম্যাচের শেষ দিকে রক্ষণে মনোযোগ দেয়। বসুন্ধরার রক্ষণের জালে বেশ কয়কবোর ধরা পড়েছেন সাইফের দুই নাইজেরিয়ান কনতে ও ইনামুয়লে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন কয়েকবার।

ম্যাচের চার মিনিটেই এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। ডি বক্সের ডান দিক থেকে ইব্রাহিমের ক্রসে বল পেয়ে গোল করেন কিংসের অধিনায়ক তপু বর্মণ। তবে সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সহকারি রেফারি আগেই অফসাইডের সিগন্যাল দিয়ে গোলটা বাতিল করে দেন।

১৬ মিনিটে নজদির ডি বক্সের সামনে থেকে ব্রাজিলিয়ান জনাথন ফার্নান্দেজের লম্বা পাসে বল পান বিশ্বনাথ ঘোষ। সাইফের ডি বক্সে বিপদজনকভাবে প্রবেশ করেন তিনি। জোরালো শট নেন ডান দিক থেকে। তবে গোলরক্ষক পাপ্পু হোসনে শট রুখে দেন। গোল করার দারুণ একটা সুযোগ হারায় বসুন্ধরা কিংস। 

২০ মিনিটে জন ওকোলির পাসে বল পেয়ে দুরন্ত গতিতে কিংসের ডি বক্সে প্রবেশ করেছিলেন সাইফের ফয়সাল আহমদে ফাহিম। তবে তার নেওয়া শটটা রুখে দেন আনিসুর রহমান জিকো। ৩২ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে জনাথন ফার্নান্দেজের নেওয়া জোরালো শট ক্রসবারে উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। ৪৫ মিনিটে ডি বক্সের বাম পাশ থেকে রহমত মিয়ার ফ্রি কিক অনেকটা লাফিয়ে রুখে দেন আনিসুর রহমান জিকো।

এক নজরে এবারের ফেডারেশন কাপ

* চ্যাম্পিয়ন : বসুন্ধরা কিংস (ট্রফি ও ৫ লাখ টাকা)

* রানার্সআপ : সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব (ট্রফি ও ৩ লাখ টাকা)

* ফেয়ার প্লে ট্রফি : চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড

* ম্যান অব দ্য ফাইনাল : রাউল বেসেরা (বসুন্ধরা কিংস)

* সর্বোচ্চ গোলদাতা : ৫টি কেনেথ ইকেচুকউ (সাইফ), রাউল বেসেরা (বসুন্ধরা কিংস)

* টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় : কেনেথ ইকেচুকউ (সাইফ)

এজেড/এমএইচ/এটি