শুধু নিজে নয়, পরিবারের সবাইকে পরতে হয় আর্জেন্টিনার পতাকার আদলের পোশাক। নিজের পুরো বাড়িটি রাঙিয়েছেন আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে। বাড়ির প্রধান ফটকে লেখা রয়েছে ‘আর্জেন্টিনা বাড়ি’।

ছোটবেলায় ম্যারাডোনার খেলা দেখে প্রেমে পড়া মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের আর্জেন্টাইন ভক্ত হাফিজুর রহমানের কাণ্ড এসব।

জানা গেছে, ছোট বেলায় ম্যারাডোনার খেলা দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হন হাফিজুর। তার পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছুতেই থাকে আর্জেন্টাইন ভক্তের পরিচয়। সব সময় গায়ে রাখেন আর্জেন্টিনার জার্সি। বাড়ির ছাদে করেছেন বাগান, সেখানেও ফুলদানিতে আঁকিয়েছেন আর্জেন্টিনার পতাকার লোগো। বাড়ির বাইরের প্রাচীরের রংটিও আর্জেন্টিনার পতাকার। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর মাস খানেক আগে এই বাড়ি রং করান হাফিজুর। ১১ জুলাই রোববার আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসায় নতুন করে রাঙিয়েছেন বাড়িটি। 

অভাবের কারণে লেখাপড়ায় বেশি দূর এগোতে পারেননি হাফিজুর রহমান। স্কুলে থাকতেই তিনি জড়িয়ে পড়েন ব্যবসায়। গ্রামেই দিয়েছেন জুয়েলারির দোকান। 

তবে তার আর্জেন্টিনা-প্রীতি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে এলাকায়। শুধু তার গ্রাম নয়, এটি ছড়িয়েছে আশপাশের অনেক গ্রামেই। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসেন হাফিজুরের ‘আর্জেন্টিনা বাড়ি’ দেখতে।

হাফিজুরের বাড়ি দেখতে আসা আবু সুফিয়ান নামে একজন বলেন, আমিও আর্জেন্টিনার ভক্ত। যে দেশে ম্যরাডোনা, মেসি, ডি মারিয়ার মত খেলোয়াড় যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন, আমি তাদের একজন ক্ষুদ্র ভক্ত। আমাদের মতোই একজন আর্জেন্টাইন ভক্ত হাফিজুর রহমান। তার বাড়িটি আর্জেন্টিনার রঙে রাঙানো হয়েছে। দেখে খুবই ভালো লাগছে। 
 
ভবনটি দেখতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মানুষ একেক দলকে বিভিন্ন সময় সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। কিন্তু হাফিজুর রহমান তার পুরো বাড়িটাই আর্জেন্টিনা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। মনে হচ্ছে তার বাড়ি যেন আর্জেন্টিনা শহর।

নিজের এমন বাড়ি নিয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, আমি যখন খুব ছোট তখন ম্যারাডোনার নাম শুনি। তখন থেকেই আমি ভক্ত হয়ে যাই। তখনও আমি খেলা বুঝতাম না। পরে যখন খেলা বুঝলাম তখন থেকে আর্জেন্টিনার জার্সি পরি। তাদের সব খেলা এখন উপভোগ করি। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছি। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে পরাজিত হলেও আশা ছাড়িনি। এলাকার মানুষ আমাকে আর্জেন্টাইন বলেই ডাকে। আমার তিন ছেলে মেয়ে। আমার ছেলেকে আমি একজন ভালো ফুটবলার বানাতে চাই। আর্জেন্টিনায় ঘুরতে যাওয়ারও ইচ্ছা আছে আমার।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ডাবলু বলেন, হাফিজুর রহমান একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী। তিনি আর্জেন্টিনার একজন অন্ধভক্ত। তার বাড়িটি আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে রাঙিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছেন।

মেহেরপুরের কৃতি ফুটবলার এমদাদুল হক এই বাড়ি নিয়ে বলেন, মনের ভালোবাসাকে বাহ্যিক রূপ দিয়েছেন হাফিজুর রহমান। পাড়াগ্রামের একজন মানুষ একটি দেশ কিংবা একজন ফুটবলারকে ভালোবেসে যে উদাহারণ সৃষ্টি করেছে তা আলোচনায় আসার মতো। আমি সাবেক একজন ফুটবলার হিসেবে বলতে পারি, বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা ভক্তদের মধ্যে হাফিজুর রহমান অন্যতম। 

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ড. মুনসুর আলম খান বলেন, অনেক মানুষ অনেক কিছুই মনে প্রাণে পছন্দ করেন। হাফিজুর রহমান আর্জেন্টিনার প্রতি যে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সত্যিই ব্যতিক্রম। তার সমর্থন সার্থক হোক এ প্রত্যাশা করি।

এমএইচ/জেএস