বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দুই ভাই দুই খেলায় জাতীয় দলে, পাঁচ ভাই ফুটবলার হওয়ার নানা ঘটনা রয়েছে। দুই ভাই একই গেমসে স্বর্ণজয়ের ঘটনা খুবই কম। সেই রকম এক সৌভাগ্যের জননী হোসনে আরা। দুই কারাতেকা হাসান খান সান ও হোসেন খান মুনের মা। দুই ছেলে যমজ। এক ছেলে আবার বিয়ে করেছেন আরেক স্বর্ণজয়ী কারাতেকা হোমায়রা আক্তার অন্তরাকে। 

২০১০ সালে দুই ভাই এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতেন। নিজেদের কারাতেকা হওয়ার পেছনে মায়ের অবদান অনেক বলে জানালেন সান, ‘২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেই। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর কিছুদিন ছুটি। খেলাধূলায় আগ্রহ ছিল। মায়ের মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রথমে আসি এবং কারাতে শুরু করি।’ 

শুরুর দিকে বাবা এই খেলায় বাধা দিত মায়ের উৎসাহেই তাদের পথচলা জানালেন সান, ‘আসলে বাবা এই খেলা সেভাবে পছন্দ করতেন না। মা আমাদের উৎসাহ যোগাতেন।’ উৎসাহ যোগালেও ব্যথা পেলে মায়ের টিপ্পনীও কম শুনেননি তারা, ‘কেন যে মারামারির খেলা বেছে নিলি তোরা।’ 

ঢাকার কেরানীগঞ্জে হোসনে আরার জন্ম। ইডেন কলেজে পড়াবস্থায় ১৯৭৮ সালে বিয়ে হয় আবুল হোসেন খানের সাথে। আবুল হোসেনে কারাতে বা খেলাধুলা পছন্দ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে হোসনে আরা বলেন, ‘সে নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। সে চাইত তারা ছেলেরা পড়াশোনা করে ভালো কিছু করুক। এজন্য তিনি খেলাধুলা পছন্দ করতেন না।’ ছেলেদের কারাতে অংশগ্রহণ তার হাত ধরেই, ‘আমিই ওদের প্রথম এনএসসিতে নিয়ে যাই। এরপর থেকে ওরা কারাতেতে নাম করে।’ ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে দুই ছেলের স্বর্ণ জয়ের দিনটি এখনো মনে আছে তার, ‘এলাকার সবাই আমার বাসায় এসেছিল। সবাই ওদের খুঁজছিল।  তখন বুঝতে পারলাম ওরা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছে।’ ছেলেদের এই সাফল্য দেখার ছয় মাস আগেই দুনিয়া ছাড়েন তাদের বাবা। 

মুন কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরাকে বিয়ে করেছেন। অন্তরা ২০১৯ এসএ গেমসে কারাতে স্বর্ণজয়ী। ছেলেদের মতো ছেলের বৌকে সাহায্য করে চলছেন হোসনে আরা, ‘অন্তরাও ওদের মতো ভালো খেলুক সেটা আমি চাই। এজন্য সাংসারিক কাজে এই বয়সে আমি যথেষ্ট সাহায্য করি।’ অন্তরাও শ্বাশুড়ির অবদানকে বড় করে দেখছেন, ‘বিয়ের পর অনেক মেয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ির চাপে পেশাগত কাজে উন্নয়ন করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান। আমি তার কাছ থেকে শতভাগ সমর্থন পাই।’

ছেলে ও ছেলের বৌ কারাতের মাধ্যমে দেশের গৌরব আরো উজ্জ্বল করবে সেই প্রত্যাশা হোসনে আরার৷ সান-মুন ও অন্তরাও চান কারাতের মাধ্যমে মাকে আরো মহিমান্বিত করতে। 

এজেড/এটি