সাঁতারে মন্ত্রীর আশ্বাস, ফেডারেশনের অঙ্গীকার
বাংলাদেশ সাঁতারের অন্যতম ‘দুঃখ’ ইলেকট্রনিক্স স্কোরবোর্ড। সেই দুঃখ নিরসনে দুই কোটি টাকা খরচ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কমপ্লেক্সে ইলেকট্রনিক্স বোর্ড স্থাপিত হলেও সেটি অকার্যকর। এত ব্যয় করার পরও বোর্ডে রয়েছে নানা ত্রুটি এর মধ্যে অন্যতম সঠিক টাইমিং প্রদর্শন না হওয়া। অপ্রচলিত ও তুলনামুলক কম জনপ্রিয় খেলায় আন্তর্জাতিক আসরের স্বাগতিক হলেও নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ সাঁতারে আন্তর্জাতিক আয়োজন করতে পারে না শুধু এই বোর্ডের জন্য।
জাতীয় সাঁতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর স্কোরবোর্ডের অচল অবস্থার বিষয়টি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা সাঁতারে শিগগিরই আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করতে চাই। এই স্কোরবোর্ড দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। বোর্ড পরিবর্তন না হলে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কখনো আমন্ত্রণ জানাতে পারব না। দ্রুত এই স্কোরবোর্ড পরিবর্তন চাই।’
বিজ্ঞাপন
আলমগীরের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই দেখলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ‘আমি বিষয়টি আগেও শুনেছি। আজ নিজেই দেখলাম। ফেডারেশনকে অনুরোধ করছি একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার জন্য। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’ সাঁতার ফেডারেশন আগেই স্কোরবোর্ডের বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়েছে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সরেজমিনে এসে বলার পর তারা আবার চিঠি দেবে।
বিজ্ঞাপন
১৯৯৩ সালে ঢাকা এসএ গেমস উপলক্ষে মিরপুরের এই সুইমিং কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছিল। ওমেগা কোম্পানির ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ড কিছু দিন চলেছিল। কারিগরি ত্রুটি ও অদক্ষতায় সেটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১০ এসএ গেমসের সময় বিশেষ ব্যবস্থায় সেটি সচল হয়েছিল। এরপর আর ইলেকট্রনিকস বোর্ড চলেনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১৭ সালে দরপত্র আহ্বান করে সুইমিং কমপ্লেক্সের স্কোরবোর্ড, ভিআইপি বক্স সহ আরো কিছু নির্মাণ করে। অন্যান্য নির্মাণ কাজ কিছুটা মানসম্পন্ন হলেও সাঁতারের মূল স্কোরবোর্ড অচল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কয়েকবার সাঁতার ফেডারেশনকে স্কোরবোর্ড বুঝিয়ে দিতে চাইলেও ত্রুটিপূর্ণ বোর্ড ফেডারেশন বুঝে নেয়নি৷ দুই বছরের বেশি সময় তাই দুই কোটি টাকার এই স্কোরবোর্ড এভাবেই রয়েছে।
স্কোরবোর্ড স্থাপনের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে খুব কঠোর অবস্থানে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, ‘এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে তারা কোনো কাজ না পায়।’
মন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে প্রকৌশলী আলমগীর বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের উপর আমাদের অগাধ আস্থা। তিনি যেটা বলেন, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করেন। আমরা আন্তর্জাতিক আসর আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করব। আমরা এই সংক্রান্ত পরিকল্পনা করব। দেখি কয় মাসের মধ্যে করা যায়। স্কোরবোর্ড ঠিক হলে আমরা আগামী বছরের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করবই।’
গতকাল সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। রোববার সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী খেলা শেষে ৩৮টি স্বর্ণ, ২৩টি রুপা ও ৮টি ব্রোঞ্জ জিতে সেরা তারা। ৫টি স্বর্ণ, ১৮টি রুপা ও ১৯টি ব্রোঞ্জ জিতে রানার্সআপ হয় সেনাবাহিনী। শেষ দিনে আরও পাঁচটি নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়। এ নিয়ে তিন দিনে ১১টি নতুন রেকর্ড গড়লেন সাঁতারুরা। পুরুষ বিভাগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাজল মিয়া ৫ টি স্বর্ণ পদক (৩টি নূতন জাতীয় রেকর্ড) পেয়ে সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হন। অন্যদিকে নারী বিভাগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সোনিয়া খাতুন ৩টি স্বর্ণ ও ২টি রুপা পেয়ে সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হন।
এই জাতীয় সাতারে সিনিয়র সাঁতারুরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পারেননি। এরপরও অনেক নতুন রেকর্ড হয়েছে। এটি সাঁতারের অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ফেডারেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা আলমগীর, ‘সাঁতারে উন্নতি হচ্ছে এর প্রমাণ এই রেকর্ড।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ বলেন, ‘সেরা সাঁতারু থেকে অন্বেষণ করা অনেক সাঁতারু নিজেদের প্রমাণ করেছেন। তারা মেধাবী সেটা এখন প্রমাণিত। তাদেরকে অনুশীলনে রাখাই আমাদের মূল দায়িত্ব এখন।’
এজেড/এনইউ