আবাসন সংকটে ইবি শিক্ষার্থীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ফাইল ছবি)
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বলা হয়েছিল প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবাসিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
প্রতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে পরিমাণ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় তার তুলনায় অপর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। শিক্ষার্থী ভর্তির সঙ্গে তাদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় আবাসন সংকট চরমে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ (২০১৯) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতকরা ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধার বাইরে রয়েছে। ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়তে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি আবাসিক হল ও ছাত্রাবাস রয়েছে। এসব হল ও ছাত্রাবাসে ৩ হাজার ৫৯৪ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা আছে। এরমধ্যে ১৯৪৬ ছাত্র ও ১৬৪৮ জন ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৫৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আছে। আর বাকি ৭৬ শতাংশের জন্য নেই কোনো আবাসানের ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার তিন যুগেও সিকিভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে দুই জেলা শহরে এবং ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেসে অবস্থান করতে হয়।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিঠুল মিয়া বলেন, আমরা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেস কম থাকার কারণে দিগুণ ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। এছাড়া বিদ্যুৎও থাকে না সবসময়। এসব মেসগুলোতে সুপেয় পানি ও নিরাপত্তার অভাবসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
শিক্ষার্থীদের এ আবাসন সংকট চরমে পৌঁছানোর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছাকেও দায়ী করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে সম্পূর্ণ আবাসিক। দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৪২ বছর অতিবাহিত হলেও শুধু ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। কোনো এক অদৃশ্য কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হয়ে ওঠেনি।’
ইবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি সভাপতি নূরুন্নবী ইসলাম সবুজ বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আবাসন ব্যবস্থা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বরাবরই শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এই মেগাপ্রকল্পের আওতায় যে ৪টি দশতলা আবাসিক হল নির্মাণ করা হবে সেটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। এ হলগুলোর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে আবাসন সংকটের অবসান হবে।
এমএসআর