তৃতীয়বারের মতো সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা। শনিবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে আচার্যের শোভাযাত্রা হবে। দুপুর ১২টায় শুরু হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোবেল বিজয়ী ফরাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরোল।

তবে এই সমাবর্তনে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা। এলইডি স্ক্রিনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই ভেন্যু থেকে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন তারা। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা অংশ নেবেন ঢাকা কলেজ ভেন্যু থেকে আর ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা অংশ নেবেন ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তনে এবার অংশ নেবেন ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক। এর মধ্যে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ৭ হাজার ৭৯৬ জন সমাবর্তনে অংশ নেবেন।

জানা গেছে, অধিভুক্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ৫১তম সমাবর্তন, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ৫২তম সমাবর্তন এবং আজ ৫৩তম সমাবর্তনের অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতবারের তুলনায় এ বছরের সমাবর্তনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমেছে। ৫২তম সমাবর্তনে অধিভুক্ত সাত কলেজের ১০ হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর এবার ৫৩তম সমাবর্তনে অংশ নেবেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। সে হিসাবে এবছর অংশগ্রহণ কমে এসেছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর ৫১তম সমাবর্তনে আলাদাভাবে সাত কলেজের কতজন অংশ নিয়েছেন সে তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিমুখী নীতির কারণেই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। যদিও ডিজিটাল সমাবর্তন বয়কট ও আলাদা সমাবর্তনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) মানববন্ধন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, স্ক্রিন সমাবর্তনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বৈষম্য করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদনকল্পে পরিচালিত ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এই ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরাসরি আয়োজনে যুক্ত থাকলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তন দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে সমাবর্তনের কার্যত কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

তারা দাবি করেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চাওয়া এমন একটি সমাবর্তন যেখানে সরাসরি রাষ্ট্রপতি, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, একজন সমাবর্তন বক্তাসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।

এসময় মানববন্ধনে দুই দফা দাবিও জানান তারা। দাবিগুলো হলো—

১. সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।

২. সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের সরাসরি অতিথিদের মাধ্যমে পদক দেওয়া।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, সমাবর্তনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে দিয়ে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে যেকোনো সময় হুটহাট মন্তব্য করাও কঠিন। তাছাড়া সমাবর্তন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আয়োজন যেখানে স্বয়ং মহামান্য উপস্থিত থাকেন। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দেওয়াটাই সমীচীন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ। অধিভুক্তির পর থেকে এসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা কার্যক্রম, প্রশ্ন প্রণয়ন, সার্টিফিকেট প্রদানসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আরএইচটি/এসএসএইচ