কুড়িয়ে পাওয়া বোতলই কাল হলো তাছফিরের
তাছফির ইসলাম
প্রতিদিনের মতো বড় ভাই স্বাধীনের (৫) সঙ্গে বিকেলে মাঠে খেলা করছিল ছোট ভাই তাছফির ইসলাম (৩)। এ খেলাই যে কাল হবে, কে জানত? খেলার সময় একটি বিষের (কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক) বোতল পায় স্বাধীন। সেই বোতলে খেলাচ্ছলে চা বানিয়ে ছোট ভাই তাছফিরকে দিলে সেও চা মনে করে বোতলে থাকা বিষ পান করে ফেলে।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে। তাছফির এই গ্রামের পূর্বপাড়ার আরিফুল ইসলামের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিশুটির মা বলেন, সোমবার বিকেলে দুই ভাই স্বাধীন ও তাছফির গ্রামের একটি মাঠে খেলা করছিল। এ সময় স্বাধীন একটি বিষের বোতল কুড়িয়ে পায়। পরে সে তাছফিরকে বলে, চা বানিয়ে দিলাম। তাছফিরও খেলাচ্ছলে বোতলে থাকা সামান্য বিষ পান করে ফেলে। কিছুক্ষণ পর তাছফির অসুস্থ হলে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সন্তানকে হারিয়ে মা পাগলপ্রায়। বারবার ছেলে হারানোর শোকে হারাচ্ছেন জ্ঞান। ছেলের শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা আরিফুল ইসলাম। মায়ের জ্ঞান ফিরলেই বলছেন, ‘আমারে আর মা বলে ডাকবে না আর? ও তাছফির...আমাকে আর কে মা ডাকবে বাবা?’ বলে চিৎকার দিয়ে আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
তাছফিরের শোকে এলাকায় ও হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে এল। তাছফিরের মরহেদের পাশে থাকা প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শিশু তাছফির কী ধরনের বিষ পান করেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ এ ব্যাপারে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুজনই শিশু। সন্ধ্যার আগে দুই ভাই খেলছিল। বড় ভাই একটি বিষের বোতল কুড়িয়ে পেলে সেটাতে চা বানিয়ে দিলাম বলে ছোট ভাইকে দিলে সে পান করে। পরে অসুস্থ হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসার আগেই মারা যায় ছোট ভাই তাছফির ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাছফিরের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
আফজালুল হক/এনএ