যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিকুল ইসলাম

রংপুরের পীরগাছায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের স্বীকৃতিসহ ওয়ারিশ হিসেবে ভরণপোষণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে আদালত।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, বিচারক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া ছাড়াও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। একই সঙ্গে ধর্ষণে জন্ম নেওয়া শিশুর ভরণপোষণ এবং ওয়ারিশ সূত্রে ধর্ষকের সম্পত্তির অংশীদারত্বের রায় দিয়েছেন বিচারক। যদি ধর্ষকের কোনো সম্পত্তি না থাকে, তাহলে ওই শিশুর ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর বিকেলে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন শফিকুল। পরে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে ২০০৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন শফিকুল ও তার স্বজনেরা।

এদিকে মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, পীরগাছার অন্নদানগর ইউনিয়নের সাতদরগাহ হরিচরণ গ্রামে দিনমজুর হানিফ উদ্দিনের বড় মেয়েকে (১৪) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন প্রতিবেশী মৃত মজিবর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন শফিকুল।

বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা এবং সন্তানের স্বীকৃতি অস্বীকার করলে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পীরগাছা থানায় মামলা করতে যায় ওই কিশোরী। কিন্তু থানা পুলিশ মামলাটি না নিয়ে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।

পরে কিশোরী বাদী হয়ে একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে ধর্ষক শফিকুলসহ তার বাবা মজিবর, চাচা মমতাজ উদ্দিন ও ফুফু নজিরনকে আসামি করে মামলা করে। ওই মামলা চলাকালীন আসামি মজিবর মারা যান। একই বছরের আগস্ট একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় মেয়েটি।

এদিকে ঘটনার পর শফিকুলও অন্যত্র বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর জন্ম নেওয়া শিশুর এবং ধর্ষকের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। আদালতে ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৩ বছর পর সোমবার এ রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে অপর দুই আসামি শফিকুলের চাচা মমতাজ উদ্দিন ও ফুফু নজিরনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় আসামি শফিকুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহুরুল ইসলাম বলেন, এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাইনি। রায় বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ