আজাদ উদ্দিন চৌধুরী ও আশ্রাফ উদ্দিন সারু

লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে জয়ী করতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতাকে আওয়ামী লীগের পদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ওই ‘বিতর্কিত’ দুই নেতাকে পদ দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে তাদের। মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।

চিঠিতে জানানো হয়, আজাদ উদ্দিন চৌধুরী ও আশ্রাফ উদ্দিন সারুকে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্যমতে, আজাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙল মার্কা নিয়ে ভোটে হেরে যান তিনি। সারু জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য। পরবর্তী সময়ে তারা কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। বিশেষ ‘সুবিধার বিনিময়ে’ অগঠনতান্ত্রিকভাবে পদ বণ্টনকে দলের জন্য অশনিসংকেত জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ত্যাগী কয়েকজন নেতা।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি রামগতি পৌরসভা নির্বাচন। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে মেয়র মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি পৌরসভার বর্তমান মেয়র। সম্প্রতি মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে মেজুকে নিয়ে জেলার শীর্ষ নেতারা সভা করেছেন। ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে নৌকাকে বিজয়ী করতে এক হয়ে কাজ করার জন্য শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে আজাদ ও সারুকে দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, রামগতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ের লক্ষ্যে তাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে পদায়ন করা হলো। এর আগে বিকেলে লক্ষ্মীপুর শহরে নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে রামগতির ৬-৭ নেতাকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে দলের এক নেতা জানান, কমিটিতে শূন্যপদে কাউকে সংযুক্ত করতে হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সভা করতে হবে। সেখানে সম্ভাব্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব ও পদ নিয়ে আলোচনা হবে। সিদ্ধান্ত হলে তা সুপারিশ করে সভার কার্যবিবরণীসহ জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। তারা (জেলা) কার্যকরী কমিটির সভায় উপস্থাপনের পর বিরোধিতা না থাকলে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তা অগঠনতান্ত্রিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ও পৌরসভার দুজন যুবলীগ নেতা জানান, সারু বদমেজাজি। তিনি মেজাজ হারালে লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে প্রায়ই গুরু-ছাগলকে গুলি করেন। ডিগবাজ নেতা হিসেবে পরিচিত আজাদ চৌধুরী নানা অপকর্মে জড়িত। দলে যোগদান না করে তারা পদ পেলে আওয়ামী লীগ থেকে ত্যাগী-নির্যাতিত নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

আশ্রাফ উদ্দিন সারু বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। দলে আমার বিনিয়োগ আছে। অনেক সাধনার পর পদ পেলাম। এখন কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আজাদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের চিঠি আমি পেয়েছি। আওয়ামী লীগে যোগদান না করে কীভাবে পদ পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। 

জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, আজাদ ও সারু এলাকায় বিতর্কিত। তারা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অগঠনতান্তিক কোনো সিদ্ধান্ত রামগতির নেতাকর্মী মেনে নেবে না।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীকে জয়ী করতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দুই নেতাকে পদ দেওয়া হয়েছে। আজাদ চৌধুরী জাতীয় পার্টি করেছেন, সেটি সঠিক। কিন্তু তারা দুজনই অনেকদিন ধরে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছেন। এজন্য তাদের পদ দেওয়া হয়েছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এএম