সোনাগাজী উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্কোয়াশ। বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষে ইতোমধ্যে সফলতা দেখছেন দুই ভাই। দেখতে শসার মতো কুমড়া-জাতীয় পুষ্টিকর স্কোয়াশ ফেনীতে উৎপাদিত হচ্ছে। খরচ ও পরিচর্যার তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় স্কোয়াশের চাষের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। অত্যধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ সবজির চাহিদাও বাড়ছে ফেনীতে। ফেনীর কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে খেতে সুস্বাদু সবজিটি।

এবার করোনাকালীন বন্দিজীবন মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। এতে কেউ বনে গেছেন উদ্যোক্তা, কেউ আবার চাষি। তেমনই একজন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নুরুল আফছার। লকডাউনের সময়কে কাজে লাগিয়ে তিনি হন সফল স্কোয়াশচাষি।

ফেনীতে প্রথম সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে চরচান্দিয়ায় রহমান অ্যাগ্রোর কর্ণধার আফছার ও শহিদুল্লাহ কাওছার গড়ে তোলেন এ বাগান। শুরুতে বাড়ির পাশে ২৫ শতাংশ জায়গায় ১ হাজার ২০০ গাছের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ সবজি চাষ করলেও সামনে এটি নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

শহিদুল্লাহ জানান, প্রথমে ড্রাগন চাষের জন্য মনস্থির করলেও পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে স্কোয়াশ এবং ক্যাপসিকাম চাষ করেন। মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্য এর ফলন আসে। গাছ ও ফুল দেখতে অনেকটা কুমড়াগাছ ও ফুলের মতো। এটি লতা ছড়ায় না। একটি গাছে ৫ থেকে ১০টি ফল ধরে। উত্তরবঙ্গ থেকে চারা এনে এবং বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে তারা চাষ শুরু করেন। প্রতিটি চারা ৫ টাকা দরে সংগ্রহ করেন তারা।

এই সবজি চাষের উপকারিতা হলো এটিতে পরিচর্যা খুব কম করতে হয়। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে মাত্র একবার সেচ দিতে হয়েছে এবং আগাছাও পরিষ্কার করতে হয় না। এটি খুব দ্রুতবর্ধনশীল ফল। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত বাড়ে। একটি ফল দেড় থেকে তিন কেজি ওজনের হয়।

স্কোয়াশ গাছে ধরেছে ফল

তিনি আরও জানান, তাদের বাগানটি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। এখানে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ২৫ শতক জায়গায় ১ হাজার ২০০ গাছের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু করেন স্কোয়াশ চাষ। ২৫ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত মাত্র একবার ফল বিক্রি করেছে ১৬ হাজার টাকা। কমপক্ষে আরও চারবার ফল সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানান তিনি। পাইকারি প্রতিটি স্কোয়াশ ৩০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন তারা। তবে বাজারে কেজি ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফেনীর স্থানীয় বাজারে এ মুহূর্তে সবজির দর নিম্নমুখী হলেও উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি।

সোনাগাজী পৌর এলাকায় দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, রবি শস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। এটি সম্পর্কে দিন দিন মানুষের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। অন্যান্য উপজেলায়ও পরীক্ষামূলকভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কোয়াশ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। স্কোয়াশ এমন একটি উদ্ভিদ, যা সারা বছরই পাওয়া যায়।

এটি উদ্ভিদগতভাবে একটি ফল হিসেবে বিবেচিত হলেও, মসৃণ ত্বক, ছোট বীজ এবং মাংসল শাঁসের জন্য এটিকে সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলে অনেকের কাছে এটি কুছা হিসেবেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় একটি খাদ্য।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ঢাকা পোস্টকে জানান, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্কোয়াশ ফেনীর কৃষিতে নতুন যোগ হলো। এর দামও ভালো। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে কৃষক আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হবেন।

শিক্ষক নুরুল আফছার জানান, নভেম্বরের প্রথম সাপ্তাহে চারা অথবা বীজ বপনের সঠিক সময় হলেও এক মাস পিছিয়ে যান। বগুড়া থেকে ৭০০ চারা সাড়ে ৫ টাকা করে কেনেন। ৫০০ বীজ কেনেন ঢাকা থেকে। ৪০ দিনের মাথায় ১৭ জানুয়ারি ১০০ কেজির বেশি ফসল মাঠ থেকে সংগ্রহ করেন। ফেনীর পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ২০ টাকায়। তিনি আরও জানান, বাড়ির ছাদে রয়েছে টমেটো, গাজর, আম, লিচুসহ নানা জাতের ফল ও সবজি। ভবিষতে তরমুজ চাষের পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।

এনএ