সাতক্ষীরায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল

সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। ঘুরে দেখা গেছে, নারকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠুর কর্মী সমর্থকরা নৌকাকে সরিয়ে কেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়েছে। 

সকাল থেকেই শহরের কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রসুলপুর, পারকুকরালী, বাঁকালসহ ১৫-২০টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক বেশী। নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী তুলনামূলক অনেকটা কম।

বাঁকাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে রাস্তায় নৌকার সমর্থকরা মিছিল শুরু করলে পাশ থেকে নারকেল গাছের মিছিল শুরু করেন নেতাকর্মীরা। তবে খুব বেশি দেখা মেলেনি অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের। তাছাড়া রসুলপুর ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার বাইরের এজেন্টদের বের করে দিতে গেলে জনগণের হামলায় আহত হন নৌকার দুই কর্মী। 

দুপুর একটার দিকে শহরের পিটিআই ভোটকেন্দ্রে জোরপূর্বক নৌকায় ভোট নেওয়ার অভিযোগ করেন ভোটাররা। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানান অপর প্রার্থীরা। পিটিআই ও পিএন স্কুল ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক বলেন, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। সবাই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। এভাবে ভোট চললে নৌকা জিতবে বলে আমার বিশ্বাস।

বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী বর্তমান মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, দুই একটি কেন্দ্রে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানানো হলে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। সকলেই উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে ভোট দিচ্ছে। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক। রসুলপুর কেন্দ্রের বাইরে থেকে মোরশেদের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থকরা এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালালে জনগণ তা প্রতিহত করে দিয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ পাঁচজন। আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন শেখ নাসেরুল হক, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে বর্তমান মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন হেভিওয়েট নাসিম ফারুক খান মিঠু ও জামায়াতের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে আছেন জগ প্রতীক নিয়ে মো. নুরুল হুদা। এছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের হাতপাখা নিয়ে ভোট করছেন মোস্তাফিজুর রউফ।

তাছাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনে লড়ছেন ৬৪ জন। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন নারী ও কাউন্সিলর পদে ৫২ জন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৭টি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৮৯ হাজার ২২৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ ও পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন।

সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবীর জানান, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে দেশের ২৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ৬১ পৌরসভায় ও তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে দেশের ৩১টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। 

তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৬৯ জন, বিএনপির ৯ জন ও স্বতন্ত্র ২৫ জন প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে মেয়র পদে তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির তিনজন ও স্বতন্ত্র ১৪ জন বিজয়ী হন।

দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির চারজন, জাতীয় পার্টির একজন, জাসদের একজন ও আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।

প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুইজন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন। 

আকরামুল ইসলাম/এসপি