বাসন্তি ঘোষ

বাসন্তি ঘোষ। বয়স ৭০ বছর। ছেলে ও পুত্রবধূর অত্যাচারে চলে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নন্দিতা সুরক্ষা’ ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উদ্যোগে বাসন্তি ঘোষ ফিরে গেলেন তার ছেলের কাছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার ভাজনডাঙ্গার বাসিন্দা মৃত নিত্যানন্দ ঘোষের স্ত্রী বাসন্তি ঘোষের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। অনেক আগেই বাসন্তি ঘোষের স্বামী মারা যান। স্বামী যখন মারা যান তখন ছেলে-মেয়ে সবাই ছোট।

স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি কারাগারের কর্মচারীর চাকরি নেন। যা বেতন পেতেন তা দিয়েই খুবই কষ্টের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন। ছেলেদের মধ্যে একজন ব্যবসায়ী ও একজন চাকরি করেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। 

চাকরি থেকে অবসরে যান বাসন্তি ঘোষ। পেনশনের যে টাকা পান তা সবই দিয়ে দেন ছেলেদের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে মূল্যহীন হয়ে পড়েন বাসন্তি। তার এক ছেলে গ্রামের বাড়ি ভাজনডাঙ্গাতে থাকেন। অন্য ছেলে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীতে থাকেন।

ওই ছেলের বাসায়ই থাকতেন বাসন্তি। কিছুদিন ধরে ছেলে ও পুত্রবধূর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন বাসন্তি। উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বের হয়ে শহরের সমাজসেবা পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রম শান্তিনিবাসে আশ্রয় নেন বাসন্তি ঘোষ।

বিষয়টি জানতে পেরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নন্দিতা সুরক্ষা ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট বাসন্তি ঘোষকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। বিকেলে ছেলের হাতে তুলে দেন মা বাসন্তি ঘোষকে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নন্দিতা সুরক্ষার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি বলেন, বেলা ১১টার দিকে একটা কাজে শহরের সমাজসেবা পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রম শান্তিনিবাসে যাই। গিয়ে দেখি শান্তিনিবাসের বারান্দায় বসে আসেন এক বৃদ্ধা। তাকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। তখন জানতে পারলাম ওই বৃদ্ধার সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূ খুব খারাপ আচরণ করেন। অভিমান করে তিনি বাসা থেকে এখানে চলে এসেছেন।

তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি বলেন, বাসন্তি ঘোষের কাছ থেকে তার ছেলের ঠিকানা নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরই মধ্যে সমাজসেবার উপপরিচালক আলী আহসানের সঙ্গে কথা বলে ওই বৃদ্ধাকে একটি রুম দেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি ওই বৃদ্ধাকে একটি রুম দেন সাময়িক থাকার জন্য। এরপর আমি ব্লাস্টের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামীর সঙ্গে কথা বলে তার সহযোগিতা চাই। পরে শিপ্রা দিদির অফিসে গিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধার ছেলে দিলীপ ঘোষকে ডেকে আনি। এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধার ছেলেও অনুতপ্ত হয়ে তার মাকে তার হাতে তুলে দিতে অনুরোধ করেন। পরে আমরা বাসন্তি ঘোষকে তার ছেলের হাতে তুলে দিই।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ফরিদপুরের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, প্রত্যেক মা-বাবাই তার সন্তানদের খুব কষ্ট করে বড় করে তোলেন। বৃদ্ধা বাসন্তি ঘোষের স্বামী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। ছেলে-মেয়েদের বড় করে তুলেছেন অনেক কষ্টে। সেই ছেলেদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার কখনো কাম্য নয়।

তিনি বলেন, বাসন্তি ঘোষের ছেলে দিলীপকে এনে বুঝিয়ে তার মাকে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ছেলে দিলীপও বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত। এমন আর হবে না বলে তিনি কথা দিয়েছেন।

এদিকে সন্তানের কাছে ফিরতে পেরে খুশি বৃদ্ধা বাসন্তি ঘোষ। তিনি বলেন, আমার অনেক ভালো লাগছে। একা একা আমার কোথাও থাকতে ভালো লাগে না। জীবনের বাকি দিনগুলো ছেলে, নাতি-নাতনি ও পুত্রবধূকে নিয়ে থাকতে চাই। 

বাসন্তি ঘোষের ছেলে দিলীপ ঘোষ বলেন, আমার ভুল হয়েছে। মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ঠিক হয়নি। আর কোনোদিন এমন হবে না। যতদিন বেঁচে থাকি নিজের কাছে রেখে মায়ের সেবাযত্ন করব।

বি কে সিকদার সজল/এএম