যশোর শহরে ময়লার স্তূপ

যশোর পৌরসভার বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে (এনজিও) দেয়ায় কর্মবিরতি পালন করছেন হরিজনরা। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে যশোর পৌরসভার সব জায়গা থেকে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ রয়েছে। বর্জ্য অপসারণ বন্ধ থাকায় শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ জমেছে। এতে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছে শহরবাসী।

জানা গেছে, পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বকশিসের বিনিময়ে নানা ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করে আসছে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যশোর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের  কাজ পেয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, শরণ মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা ও ডেভেলপমন্টে অর্গানাজেশন সোসাইটি (ডোজ)। এতে হরিজনরা পেশা সঙ্কটে পড়েছেন। 

শহরের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ জমেছে

রোববার (২০ ডিসেম্বর) শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে রাখা বর্জ্য অপসারণ না করায় অনেকটা ময়লার শহরে পরিণত হয়েছে যশোর। শহরের দড়াটানা, মনিহার, বেজপাড়া, শংকরপুর, শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, স্টেডিয়ামপাড়া, পালবাড়ি, পুলিশ লাইন্স, জিলা স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ জমেছে। ময়লা অপসারণ না হওয়ায় এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। 

যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন হিরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হরিজনরা বর্জ্য অপসারণ না করায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশি করে ধুপকাটি জ্বালাতে হচ্ছে। যশোর শহর অপরিষ্কারের শহরে পরিণত হয়েছে।

পৌর পার্ক এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো পৌরসভার লোকজন ময়লা অপসারণ করছে না। যে কারণে ময়লার স্তূপ জমেছে। কী কারণে হরিজনরা ময়লা অপসারণ করছেন না সেটা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি বেতন নিয়ে সমস্যা হয়েছে। তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন। 

যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিলাল হরিজন বলেন, মাসে ৩০ দিন কাজ করার পর অসুস্থ হলেও আমরা কোনো প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাই না। একদিন অনুপস্থিত হলে চাকরিচ্যুত হতে হয়। আমাদের ভ্যান চালকরা (বাঁশিওয়ালা) নিজ উদ্যোগে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি থেকে কিছু বকশিশের বিনিময়ে রান্নাঘরে ব্যবহৃতসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করে আসছিল। কিন্তু এনজিওগুলো বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে তত্ত্বাবধানের নামে অর্থলোপাটের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। 

বর্জ্য অপসারণ না করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে

তিনি আরও বলেন, এমনিতে হরিজনদের যে মজুরি তা দিয়ে মোটেও সংসার চলে না। আমরা বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যে বকশিস পাই তা দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। তাতেও এখন বাধা দেয়া হচ্ছে। 

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম বেসরকারি খাতে দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে তিনটি এনজিওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পৌরসভার অধীনে রাখার সুযোগ নেই। এডিবির অর্থায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওর মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ সংগ্রহ করে শোধনাগারে পাঠানো হচ্ছে। 

তিনি বলেন, এই কাজে হরিজনদেরও সম্পৃক্ত করতে এনজিওগুলোকে বলা হয়েছে। কিন্তু হরিজনরা রাজি নন। কারণ আগে তারা বাসাবাড়ি থেকে টাকা তুলে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিতেন। সে সুযোগে এখন থাকছে না। এ জন্য তারা প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে দাবি আদায় করতে চান। হরিজনরা দুই ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে অন্য কাজে চলে যান। তারপরও আমি দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের বেতন বাড়িয়েছি। 

জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, শহরের ময়লার স্তূপ অপসারণে বিকল্পভাবে কাজ চলছে। হরিজন ও সুইপারদের অনেকেই কাজ করতে রাজি হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা সমাধান হবে। 

আরএআর