পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ দাবি
পুরোদমে মাড়াই মৌসুম চালু করা, মিলের কর্মরত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা, আগাম আখ চাষের জন্য কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটি প্রদানসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছেন। কারও চাকরি যাবে না, এমন ঘোষণার পরও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিনিকলটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিনিকল ঘিরে শত শত মানুষের জীবন ও জীবিকা চলছে। বর্তমানে এ চিনিকলে মোট ৭৪৪ জন শ্রমিক ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে লোকসান কমমাতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে
বিজ্ঞাপন
আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) পঞ্চগড়-ঢাকা সমহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ আখচাষি ফেডারেশনের ডাকে পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন এ আন্দোলন করে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় চিনিকল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ জেলার বিভিন্ন এলাকার বেকারদের জীবন-জীবিকার আশ্রয়স্থল ছিল এ চিনিকল। তবে চলতি মৌসুমে আখমাড়াই বন্ধ থাকায় হতাশায় দিনাতিপাত করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, চিনিকলটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিনিকল ঘিরে শত শত মানুষের জীবন ও জীবিকা চলছে। বর্তমানে এ চিনিকলে মোট ৭৪৪ জন শ্রমিক ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে লোকসান কমাতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে।
চিনি সংগ্রহের হার, আখের জমি, চিনিকলের অবস্থা, লোকসান এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনা করে চলতি আখ মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের মধ্যে সম্ভাবনাময় ৯টি চিনিকলে আখমাড়াই চালু রাখে। বাকি ৬টি চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। এ ৬টি চিনিকলের মধ্যে পঞ্চগড় চিনিকল রয়েছে। ঘোষণার পর থেকে চিনিকলের কর্মচারী ও শ্রমিকদের চোখে মুখে পড়েছে হতাশার ছাপ।
পঞ্চগড় চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, লোকসান কমানোর জন্য চলতি বছর চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ থাকবে। অন্য কার্যক্রম চলবে এবংএলাকার কৃষকদের উৎপাদিত আখ পার্শ্ববর্তী চিনিকলে মাড়াইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এখানকার স্থায়ী এবং মৌসুমি জনবলদের পর্যায়ক্রমে অন্য চিনিকলে সমন্বয় করা হবে।
পঞ্চগড় চিনিকলের কর্মচারী আবুল বাশার বলেন, পঞ্চগড়ে চিনিকল হওয়ায় এলাকার আখচাষিরা লাভবান হয়েছেন। পাশাপাশি শত শত বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে। এতে আমরা বেকার হওয়ার সংশয় নিয়ে দিনরাত পার করছি।
হঠাৎ চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে আমরা কয়েক শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ব। চার মাস ধরে বেতন পাই না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই। সরকারের কাছে দাবি, পুনরায় মিলটি চালু করে আমাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হোক
আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক, পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন
একই কথা বলেন চিনিকলের শ্রমিক নবী হোসেন, চিনিকলে স্থায়ী ও মৌসুমি শ্রমিক-কর্মচারী ৭৫০। চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধে থমকে যেতে বসেছে আমাদের জীবন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিনিকলটি পুনরায় চালুর দাবি জানাচ্ছি।
পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, হঠাৎ চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে আমরা কয়েক শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ব। চার মাস ধরে বেতন পাই না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই। সরকারের কাছে দাবি, পুনরায় মিলটি চালু করে আমাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হোক।
পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার বলেন, চলতি আখমাড়াই মৌসুমে পঞ্চগড়সহ ৬টি চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আখ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও চিনিকলে পাঠানো হবে। শ্রমিকদের সমন্ধয় করা হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। তবে কারও চাকরি যাবে না।
এর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় পাবনা চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, কুষ্টিয়া চিনিকল, শ্যামপুর চিনিকল, সেতাবগঞ্জ চিনিকল ও রংপুর চিনিকলের আখমাড়াই চলতি বছর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২ ডিসেম্বর পঞ্চড়গ চিনিকলে এ নির্দেশনা আসার পর বিক্ষোভ চড়িয়ে পড়ে পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের মধ্যে।
এনএ