শাহাবুল-আছমিনা দম্পতি

চার বছর আগে ফুরশেদপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহাবুল ইসলামের (৩০) সঙ্গে বিয়ে হয় একই গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে আছমিনা খাতুনের (২৪)। শুরুর দিকে সংসারে সুখের হাওয়া বইলেও বছরখানেক আগে থেকে নানা কারণে দেখা দেয় অশান্তি। বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রীর কাছে টাকা দাবি করতে থাকেন শাহাবুল।

শাহাবুল ইসলাম-আছমিনা দম্পতির মতো এমন অনেক ভাঙা সংসার জোড়া দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে জেলা পুলিশের ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার’। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থিত ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারে’র মধ্যস্থতায় অনেক শিশু ফিরে পেয়েছে মা-বাবার ভালোবাসা ভরা পরিবার।

মঙ্গলবার (২ মার্চ) উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের হস্তক্ষেপে শাহাবুল-আছমিনা দম্পতির ভাঙা সংসারে শান্তি ফিরেছে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার ফুরশেদপুর গ্রামের পুনরায় সংসার করার শপথ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা।

উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, সংসারের শান্তির আশায় আছমিনাও বাবার বাড়ি থেকে নানা সময়ে নিয়ে আসেন টাকা। এতেও শান্তি ফেরে না সংসারে। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে থাকে শাহাবুলের। অসহায় আছমিনা একসময় স্বামীর দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় শাহাবুল শুরু করেন স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন।

তাতেও কাজ না হওয়ায় শাহাবুল আছমিনাকে তালাকের হুমকি দেন। অসহায় আছমিনা সংসার হারানোর ভয়ে ধরনা দেন সমাজপতিদের দ্বারে। এখানেও ব্যর্থ। জোড়া লাগে না ভাঙতে বসা আছমিনার সংসার। একপর্যায়ে স্থানীয়দের পরামর্শে আছমিনা যান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সমস্যার সমাধান পেতে আবেদন করেন পুলিশ সুপারের কাছে।

এদিকে সব শুনে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন তার কার্যালয়ে অবস্থিত উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারকে। দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিতা রানী বিশ্বাস উভয় পক্ষকে সাপোর্ট সেন্টারে ডেকে আনেন। উভয়ের সমস্যার কথা শোনেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উভয়কে অনুরোধ করেন। এতে নিজের ভুল বুঝতে পারেন শাহাবুল। তারপর শাহাবুল ভুল স্বীকার করে আবারও আছমিনার সঙ্গে সংসার করতে রাজি হন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এএসআই মিতা রানী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে জানান, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার’ ইতিপূর্বেও একাধিক পরিবারকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শুধরে দিয়েছে ভুল-বোঝাবুঝি।

চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, অনেক সময়ই ছোটখাটো কারণে অনেকের সংসার ভেঙে যায়। এতে অনেক শিশুই মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। এতে ওই সব শিশুর সঠিক বিকাশ হয় না। এসব দেখে জেলা পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারে’র মাধ্যমে সেবা দেওয়ার।

আফজালুল হক/এনএ