সম্পদের লোভে বোনকে হত্যা করল ভাই
সম্পদের লোভে চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আপন বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত আপন ভাই শফিউল আজম ও চাচাতো শামীম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরিকল্পিতভাবে আপন বোন শামীমা বেগমকে (৪০) হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন দুই ভাই। তার আগে হত্যার উদ্দেশে তাকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে যায় শফিউল ও শামীম।
বিজ্ঞাপন
আটকরা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের মৃত আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শফিউল আজম (৫২)। তিনি ঢাকার দক্ষিণখান কাঁচা বাজার সংগ্রামী সরণী রোডের ৩১২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। অপরজন একই এলাকার শামীম হোসেন। তিনি নায়েব আলী মৃধার ছেলে।
রোববার (৭ মার্চ) কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকা থেকে প্রথমে শফিউল আজমের চাচাতো ভাই শামীম হোসেনকে ও পরে শফিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগের সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৮ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম খাইরুল আলম এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, সম্পদের লোভে বোনকে হত্যা করেছে শফিউল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আপন ভাই শফিউল আজম হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, গত ৪ মার্চ মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন আটক শফিউল আজম। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন তার বোন শামীমা বেগম গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর রানাখড়িয়ায় বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রওনা হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত বোনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে বোনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ রোববার মিরপুর এলাকা থেকে প্রথমে শামীম হোসেনকে ও পরে শফিউলকে গ্রেফতার করে।
এসপি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শামীম হোসেন তার চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন এবং পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নেত্রকোনা শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শফিউল আজম হোটেলে দুজন লোক পাঠায়। ভাড়াটিয়া দুজনের সহায়তায় শামীম চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে নেত্রকোনা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে কংস নদীতে ফেলে দেয়। গত ৩ মার্চ দুপুর পৌনে একটার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজন নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানিয়েছে, তার চাচাতো ভাই শফিউল কিছু দিন আগে তার চাচাতো বোন শামীমাকে নেত্রকোনা নিয়ে যেতে তার কাছে সাহায্য চান। শামীমার মা মারা যাওয়ার পর চাচাতো ভাই শফিউল আজম অন্য এক নারীকে মা সাজিয়ে তার মায়ের নামে ঢাকায় ৬তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেন।
পুলিশ সুপার বলেন, জালিয়াতি করে বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শফিউলের বাবা আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে ছেলের নামে ঢাকায় সিভিল কোর্টে মামলা করেন। ওই মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বোন শামীমা বেগম। প্রায় ২৫ বছর আগে নেত্রকোনা সদরে শামীমার বিয়ে হলেও অল্প দিনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে শামীমা ঢাকায় বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। কিন্তু ভাই শফিউল বোন শামীমাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য একপর্যায়ে শামীমা তার স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। সম্পত্তি জালিয়াতির মামলায় যাতে বোন সাক্ষী দিতে না পারে এজন্য দুই ভাই শফিউল ও শামীম বোন শামীমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুষ্টিয়া সদর সার্কেল) মো. আতিকুল ইসলাম ও মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজু আহমেদ/এসএসএইচ