শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহাজাহান মৃধা ও সাকিবুল

জন্মগতভাবেই সাকিবুলের হাত-পা বাঁকা। দাঁড়াতে বা বসতে পারলেও চলাফেরা করতে পারে না। চলাফেরা করতে তার অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। স্কুলে বা প্রাইভেটে সহপাঠীরা অনেক সময় তাকে না নিয়েই চলে যায়। সহপাঠীদের হইহুল্লোড় করে পড়তে যাওয়ার আনন্দ নির্বাক চোখে তখন দেখা ছাড়া উপায় থাকে না সাকিবুলের।

ছেলের এমন মনোবেদনা দেখে মা-বাবারও বেদনার শেষ থাকে না। সাকিবুলের বাবা শাহাজাহান মৃধাও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান তিনি। পঙ্গুত্ব নিয়ে পুরোনো কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন। এতে তার যা আয় হয়, তা দিয়েই তার সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই সামান্য আয়ে তিনি ছেলেকে চলাফেরা-সহায়ক উপকরণ কিনে দিতে পারছেন না।

সাকিবুলের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রামে। সে উপজেলার বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ঢাকা পোস্টের কাছে ১৩ বছর বয়সী সাকিবুল জানায়, সহপাঠীরা প্রায়ই আমাকে রেখে চলে যায়। আমাকে নিয়ে যেতে তাদের কষ্ট হয়। একটা হুইলচেয়ার পেলে সহপাঠীদের কষ্ট দিতাম না।

সাকিবুলের মা হোসনে আরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাকিবুল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণিতে সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। কিন্তু সে হাঁটতে পারে না। একা একা স্কুলে যেতে পারে না। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে অনেক বড় চিকিৎসকের কাছে নিয়েছি। তারপরও তাকে ভালো করতে পারিনি।

সাকিবুলের বাবা শাহাজাহান মৃধা বলেন, আমার পা নেই। দরজির কাজ করলে কিছু পয়সা পাই। তা দিয়ে সংসার চালাই। না করলে খাবার জোটে না। পা না থাকলেও মাঝেমধ্যে সাকিবুলকে স্কুলে দিয়ে আসি। সব সময় পারি না। আমার তেমন আয় নেই যে তারে একটা হুইলচেয়ার কিনে দেব, যা দিয়ে সে একাই স্কুলে যেতে পারবে।

বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন মহলে কথা বলেছি। তারপরও কোনো ফল পাইনি। তার একটা হুইলচেয়ার দরকার। সে হুইলচেয়ার পেলে সামনে স্কুল চালু হলে একা একাই স্কুলে আসতে পারবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সাকিবুলকে একটি হুইলচেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

জালাল উদ্দিন হাককানী/এনএ