দিশেহারা রেসনি বেগম

নিজের বুকের ধন শিশুসন্তানকে শত শত মাইল দূরে রেখে শুধু সংসার গড়ার আশায় পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন রেসনি। আড়াই হাজার টাকায় টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেন স্বপ্ন বোনা। তবে সব স্বপ্ন ও সম্বল কেড়ে নিয়েছে নির্দয় আগুন। ছেলের দুধ কেনার জন্য জমিয়েছেন দুই হাজার টাকা। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচাতে পারেননি তাও।

শুধু তা-ই নয়, কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে বিছানাপত্র কিছুই আর বাকি নেই। সব কেড়ে নিয়েছে আগুন। এখন থাকার জায়গাটুকুও নেই রেসনি বেগমের। বাচ্চার খাবার দুধ কীভাবে জোগাড় করবেন, সে চিন্তায় দিশেহারা রেসনি।

অভাবের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে তার। ছেলের বয়স মাত্র এক বছর। এখানে পরিবারে কেউ না থাকায় গ্রামেই রেখেছেন ছেলে ও দুই মেয়েকে। প্রতি মাসে তাদের জন্য দুই হাজার টাকা পাঠাতেন। এই টাকা দিয়েই ছেলের দুধ ও দুই মেয়ের লেখাপড়া কোনোমতে চলত।

ঢাকা পোস্টের কাছে কান্নজড়িত কণ্ঠে রেসনি বলেন, কিছুই বাঁচাইতে পারি নাই, সোক (সব) শ্যাশ হয়া গেইচে, ছোলের দুধ কেনার জন্নি দুই হাজার ট্যাকা থুচনু, তাও পুড়ি শ্যাশ হয়া গেইচে। একন তো রাতত সুতি থাকারও কিচু নাই। খালি পাকাত (মেঝে) সুতি আচি (শুয়ে আছি) হামরা। বেতনের ট্যাকা পায়া দোকানত দিয়া ফির (আবার) বাকি খরচ নিচি। সেই বাজার, খাট কাপড়চোপড়, বিচনাপাতি সোক পুড়ি গেইচে।’

বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব হারিয়েছেন রেসনি। কার কাছে সাহায্য চাইবেন, কার কাছে যাবেন, কিছুই জানেন না তিনি। শুধু বলছেন, ক্ষুধা লাগলে কেঁদে উঠবে তার আদরের ছোট সন্তান।

সব হারিয়ে লাভলীও নিঃস্ব

নীলফামারীর ডিমলা থানা এলাকা থেকে আশুলিয়ার উইন্ডি পোশাক কারখানায় সহকারী পদে চাকরি নেন রেসনি। স্বামী শফিকুল করেন রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ। কোনো দিন কাজ পান, কোনো দিন পান না। প্রায় এক বছর ধরে স্বামীসহ টিনের ছোট ঘরটিতে আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি। সব হারিয়ে এখন তিনি বড় অসহায়।

এদিকে বেতনের ১০ হাজার টাকা রুমে রেখে সকালে ববিন কারখানায় যান লাভলী বেগম। দুপুরে আগুন লাগার খবর পেয়ে এসে দেখেন, টাকা, কাপড়চোপড়, বিছানা, খাটসহ সব পুড়ে ছাই। তিলে তিলে গড়া ছোট সংসার হারিয়ে লাভলী এখন দিশেহারা।

শুধু রেসনি আর লাভলী নন, এমন অবস্থা প্রায় অর্ধশতাধিক অসহায় পোশাকশ্রমিকের। বুধবার সকালে আগুনে তাদের স্বপ্ন জ্বলেপুড়ে ভস্ম হলেও এখনো তাদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। তাদের খোঁজও নেয়নি কেউ। তাই ঘরসংসার হারানো এসব শ্রমিক এখন রাত কাটাচ্ছেন না খেয়ে, না শুয়ে।

ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আব্বাসিয়া মার্কেটের পেছনে আলম হোসেন ও মনির হোসেনের শ্রমিক কলোনিতে আগুন লাগে। এতে প্রায় ৭০টির মতো ঘর পুড়ে যায়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

মাহিদুল মাহিদ/এনএ