মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষক ও পাঁচ শিক্ষার্থীর পরিবারকে সম্মাননা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষক ও পাঁচ শিক্ষার্থীর পরিবারকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান।

কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক। 

ছয় শহীদ হলেন— গণিত বিভাগের শিক্ষক এসএম ফজলুল হক; পাঁচ শিক্ষার্থী ওয়াসিমুজ্জামান ওয়াসিম, শামসুল আলম, ওমর ফারুক, শওকত আলী ও লায়েক আলী।

শহীদ শিক্ষক এসএম ফজলুল হকের পরিবারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার বোন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ভাইয়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেক জায়গায় গেছেন। কিন্তু কোথাও স্বীকৃতি পাননি। রাজশাহী কলেজের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা তাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

ওই অনুষ্ঠানে শহীদ শিক্ষার্থী ওয়াসিমুজ্জামান ওয়াসিমের বোন জুলফিয়া বেগমও এসেছিলেন ভাইয়ের পরিবারের তরফ থেকে সম্মাননা নিতে। স্মৃতিচারণ করে জুলফিয়া বেগম বলেন, তার ভাই রাজশাহী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভোরে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। এরপর তিনি আর ঘরে ফেরেননি। তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।

মরদেহের সন্ধান মেলেনি আরেক শহীদ শিক্ষার্থী শওকত আলীরও। সম্মাননা নিতে এসে তার বোন অধ্যাপক রোজেটি নাজনীন জানান, ভাই শওকত আলী ছিলেন ছাত্রলীগের প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক। একাত্তরের ৭ মার্চ তিনি বাড়ির ছাদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ইপিআর সদস্যের খাবার দিয়েছিলেন। এটাই ছিলো তার অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, একাত্তরের ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টার দিকে বাবা সাত্তার আলী ও ভাই শওকতসহ ৬ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাকহানাদার বাহিনী। পরে তাদের হত্যা করা হয়।

শহীদ শিক্ষার্থী শামশুল হুদার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মাননা নেন তার ছেলে ফজলে হাতের বকুল। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, যখন তার বাবা শহীদ হন, তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন। তার পরিচয় তিনি শহীদের সন্তান। এ জন্য তিনি গর্বিত।

অনুষ্ঠানে প্রফেসর হবিবুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ শহীদ শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সম্মাননা জানিয়েছে রাজশাহী কলেজ। পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী কলেজ পরিবারেরও সদস্য। সুতরাং তাদের সুখ-দুঃখে রাজশাহী কলেজ পরিবার সবসময় পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দিন, শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক প্রফেসর ড. পীযুষ কান্তি ফৌজদার।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওলিউর রহমান বাবুসহ কলেজের সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শহীদ পরিবারের সদস্য ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর