রংপুর সিটি বাজারে মাছের ব্যবসা করেন রবিউল ইসলাম। প্রতিদিনের মতো বেচাকেনা শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন তিনি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠা রবিউল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির পাশে সড়কে হাঁটতে বের হন। হঠাৎ খেয়াল করেন তার পাশের বাড়িতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। যোগ দেন আগুন নেভানোর কাজে।

কিন্তু ততক্ষণে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এতে তার (রবিউল ইসলাম) বাড়িতেও আগুন লেগে যায়। আগুন নেভানোর আগেই তার তিনটি থাকার ঘর ও একটি রান্নাঘর পুড়ে ছাই। কোনোরকমে বাড়িতে থাকা একটি সেলাই মেশিন বের করেছেন আগুন নেভাতে আসা লোকজন। পরনে তার ছেড়া লুঙ্গি আর গেঞ্জি ছাড়া কিছুই নেই। আগুন থেকে রক্ষা করতে পারা সেলাই মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত রবিউল।

রংপুর নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া সুইপার কলোনিতে বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে রবিউলসহ আরও ১০-১২টি পরিবারের সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। বাদ যায়নি বিছানা, খাট, এমনকি রান্না করা ভাতের পাতিলও।

রবিউল ইসলাম

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আগুন নেভাতে সহযোগিতা করা হেলাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলোনির মমেনা বেগমের বাড়ির রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়া আগুনে অনেকগুলো পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারও ঘরে থাকা সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়েছে। অনেকে রাতে রান্না করে রাখা খাবারটুকুও খেতে পারেনি। যদি ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে না পৌঁছাতে পারতো তাহলে পুরো কলোনি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেত।

যার ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত সেই মমেনা বেগম বিলাপ করছিলেন। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অসুস্থ বেটার বউয়োক (ছেলের স্ত্রী) দেখতে গেছি হাসপাতালোত, স্যাটে (সেখানে) থাকি শুননো বাড়িত আগুন নাগছে। আসি দেখি কিছু নাই, মোর ঘরের সোগকিছু পুড়ি শ্যাষ। এই পেন্দোনোত (পরনে) যা কাপড়চোপড় দেখতেছেন এইটা ছাড়া আর কিছুই নাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মোর ছাওয়ারা (ছেলেরা) কী করি খাইবে সেটারও আর কোনো বুদ্ধি থাকিল না। হামরা কেমন করে চলমো। মানুষের বাড়িত কাম করি খাই, এখন কেউ যদি দয়া না করে ভিক্ষা করি খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই আর হামার।’

দুইটি ঘর পুড়ে যাওয়ায় হাউমাউ করে কাঁদছেন আর পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো দেখছেন ছকিনা বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হামরা আইত (রাত) পোয়াইলে (পোহালে) মাইনষের বাড়িত যায়া কাম করি খাই। কিছুই তো আর নাই থাকমো কোটে? চোখের সাইমনাত (সামনে) সোগ (সব) পুড়ি ছাই হইল।’

রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র ফায়ার স্টেশন অফিসার বাদশাহ মাসুদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তিনটি ইউনিট সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তবে মোট ১০টি পরিবারের ১০টি বসতঘর, তিনটি রান্নাঘর ও দুইটি গোয়ালঘর পুড়ে গেছে। বাড়িগুলোতে টিনশেডের ঘর ছিল, যারা কিছু মালামাল বের করতে পারছে সেটাই। আর বাকি সব পুড়ে গেছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ