ঝালমুড়ি বিক্রেতা মর্জিনাকে দোকান কিনে দেন ছাত্রলীগ নেত্রী সাথি ইসলাম

অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে সংবাদ প্রচারের পরে একটি দোকানের ব্যবস্থা হল সেই ঝালমুড়ি বিক্রেতা মর্জিনা বেগমের। মাদারীপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক সাথি ইসলাম তার নিজ অর্থায়নে মর্জিনাকে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান কিনে দেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে মাদারীপুর শুকুনিলেকের বড়মসজিদের পাশে দোকান নিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয় মর্জিনার। তবে দোকান হলেও বিক্রয়সামগ্রীর ব্যবস্থা এখনো হয়নি।

সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দোকানটি পরিপূর্ণভাবে শুরু করতে না পারলেও, দোকান পেয়ে মর্জিনা এখন আশায় বুক বাঁধছেন। ঘুড়ে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখছেন তার পরিবার নিয়ে।

গত ৮ মার্চ ‘ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন মর্জিনা’ এই শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হয় মর্জিনাকে নিয়ে। বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রী সাথি ইসলামের নজরে আসলে তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং কর্মসংস্থানের জন্য দোকানের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি কিছু বিক্রয়সামগ্রী কিনে দেওয়ারও আশ্বাস দেন।
 

এখন রাস্তায় রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে হবে না মর্জিনা বেগমের

মাদারীপুর সদরে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের মিলগেট এলাকায় মর্জিনা বেগমের বসবাস। বিয়ে হয়েছিল মুন্সিগঞ্জের ছালাম ব্যাপারীর সঙ্গে। স্বামী ছালাম পেশায় ছিলেন বেলুনবিক্রেতা। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের অভাবের সংসার। ভাড়াবাড়িতে থেকে কোনোরকমে চলছিল পাঁচ সদস্যের সংসার।

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুর পর মর্জিনা বেগমের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। নিরুপায় হয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। এখানে এসেও দরিদ্রতা পিছু ছাড়েনি তাকে। বাবার বাড়িতে ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই।

মর্জিনার বড় ছেলে শাওন ব্যাপারী (১৪) দিনমজুরের কাজ করলেও তাতে চলছিল না সংসার। তবে হাল ছাড়েননি মর্জিনা। অবশেষে স্বল্পপুঁজি নিয়ে মর্জিনা নিজেই নেমে পড়েছেন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। নিজ এলাকাতে লজ্জায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে না পারায় চলে আসেন মাদারীপুর শহরে।

দোকানে সামনে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মর্জিনা বেগম

এখানে এসে ডিসি ব্রিজ ২ নম্বর শকুনি এলাকায় একটি টিনের বাসায় ছেলে-মেয়েদের ভাড়া থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন এই নারী। ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনে আয় করেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

সাথি ইসলাম বলেন, আমি কিছু দিন আগে ঢাকা পোস্টে একটি নিউজ দেখতে পাই যে, মাদারীপুরে ২ নম্বর শকুনিরোডে মর্জিনা নামের এক নারী ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। বিষয়টি দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে আমি একটি দোকান কিনে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আপাতত দোকানে কোনো পণ্য নেই। আমি বিক্রয়ের জন্য কিছু পণ্য কিনে দেব। আমরা সবাই যদি মর্জিনার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াই; তাহলে তার জীবনটাই বদলে যাবে।

মর্জিনা বেগম বলেন, আগে রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। এতে খুব কষ্ট হত। এখন এই দোকান পাওয়াতে আমি অনেক খুশি। আর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে হবে না; এখন দোকানে বসেই বিক্রি করতে পারব।

নাজমুল মোড়ল/এমএসআর