নরসিংদীতে বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকার দুমড়েমুচড়ে চারজন নিহত

দুই বাসের প্রতিযোগিতায় চ্যাপ্টা প্রাইভেটকার। ঝরে গেল তিন বোনসহ চারজনের প্রাণ। আহত হয়েছেন একজন। নতুন বছরের প্রথমদিন সড়কে কান্নার রোল। দুই বাসের প্রতিযোগিতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকার দুমড়েমুচড়ে চারজন নিহত হন। শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণপুর ইউনিয়নের জঙ্গুয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ।

নিহতরা হলেন প্রাইভেটকারের মালিক গাজীপুরের আউটপাড়া এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে নওয়াব আলী (৫৪); তিনি ঢাকার উত্তরার একটি বায়িং হাউসের জেনারেল ম্যানেজার, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চলনা এলাকার বেনু মিয়ার মেয়ে খায়রুন্নাহার (৩৫), কামনা আক্তার (২৪) এবং তৃষা আক্তার (২২)। তারা তিন বোন।

আহত নারীর নাম রুনা বেগম। নিহত তিন বোন নওয়াব আলীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। অন্যদিকে আহত রুনা নিহত তিন বোনের বান্ধবী। তারা সবাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে নরসিংদী ফিরছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আল মোবারকা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ঢাকাগামী প্রাইভেটকার দুমড়েমুচড়ে চারজন নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আল মোবারকা পরিবহন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস পরিবহন প্রতিযোগিতা করে চলছিল। নারায়ণপুর ইউনিয়নের জঙ্গুয়া এলাকায় তিতাস পরিবহনকে ওভারটেক করতে যাচ্ছিল মোবারকা পরিবহন। 

এ সময় সামনে থেকে আসা প্রাইভেটকারে ধাক্কা দেয় মোবারকা পরিবহন। এতে প্রাইভেটকার দুমড়েমুচড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান প্রাইভেটকারের চার যাত্রী। পাশাপাশি একজন গুরুতর আহত হন।

খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেটকার কেটে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি প্রাইভেটকারে থাকা এক নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক আলাউদ্দিন বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে চলছিল। হঠাৎ দ্রুতগতিতে মোবারকা বাসটি পেছন থেকে সামনে থাকা তিতাস পরিবহনকে ওভারটেক করে। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয়। ভ্যান থামিয়ে দেখি মোবারকা বাসের নিচে প্রাইভেটকার। প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রীর মধ্যে চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ভ্যানচালক আলাউদ্দিন

প্রত্যক্ষদর্শী মারুফ মিয়া বলেন, বিকট শব্দের আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রাইভেটকার চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। ভেতরে চারজনের মরদেহের পাশে একজনকে নড়তে দেখে বের করার চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু পা ভেতরে আটকে থাকায় ব্যর্থ হই। পরে গাড়ি কেটে চারজনের মরদেহ এবং আহত নারীকে বের করা হয়।

ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাকিব হোসাইন বলেন, আমরা টহলে ছিলাম। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। বাস যেভাবে প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিয়েছে এতে কারও বাঁচার কথা না। পরে আহত অবস্থায় এক নারীকে প্রাইভেটকারের দরজা কেটে উদ্ধার করি। বাকি চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

এএম