বিঘাপ্রতি ২২ হাজার টাকা লাভের আশা
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা
সিরাজগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের ভালো ফলনে হাসি ফুটছে কৃষকদের মুখে। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছে। ধান ঘরে তুলতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা। আর কিষানিরা ব্যস্ত ধান মাড়াই ও আনুষঙ্গিক কাজে।
চলনবিল ও যমুনা নদী-অধ্যুষিত জেলা সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে ধান কাটা। জেলার তাড়াশ উপজেলাধীন এলাকায় অধিক সময়জুড়ে বিলে পানি থাকায় কৃষকের মূলত প্রধান স্বপ্ন থাকে ধান ঘিরে।
এ ছাড়া কাজিপুর, এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর যমুনা নদী-অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানেও কৃষকের স্বপ্ন নিহিত থাকে বোরো ধানেই। এবার তেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকা এবং কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রণোদনায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শতভাগই পূরণ হয়েছে। এ বছর ১ লাখ ৪১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও জেলায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তবে তাড়াশ এলাকায় ফসলি জমিতে যত্রতত্র পুকুর খননে যেমন জমি কমেছে, তেমনি এর কারণে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা ও ভুট্টার চাষ বাড়ায় শতভাগ সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও তাড়াশের কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, কৃষকেরা উৎসবের আমেজ নিয়ে নতুন ধান কাটতে শুরু করেছেন। কেউ মেশিনে ধান ঝাড়ছেন, কেউ ধান পরিস্কার করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আর নারীরা বাড়িতে ব্যস্ত আছেন ধান প্রক্রিয়াজাত করতে।
বিজ্ঞাপন
কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে তাড়াশের চলনবিল-অধ্যুষিত মাগুড়া, সগুনা, ঘরগ্রাম, ধামাইচ, শ্যামপুর, চর হামকুড়িয়া ও শাহজাদপুরের নদীতীরবর্তী নরিনা ইউনিয়নের চর-নরিনাসহ উপজেলার নিচু স্থানে বোরো জাতের ধান (আগুর ধান) পেকে যাওয়ায় তারা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এবার ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে বলেও জানান তারা।
তাড়াশের মাগুড়া বিনোদ এলাকার কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈরী আবহাওয়া না থাকার সঙ্গে কৃষি অফিস থেকে সঠিক পরামর্শ ও যথাসময়ে বীজ, সার ও কীটনাশক পাওয়ায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এখন ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলেই বাঁচি।
ঘরগ্রামের কৃষক কৃষ্ণ পদ ঘোষ বলেন, এবার তুলনামূলক ধানের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ২৬ থেকে ৩০ মণ হারে ধান পাওয়া যাচ্ছে। বিঘাপ্রতি সার, বীজ ও কাটা বাবদ সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় (জায়গা ও দূরত্বভেদে) ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এখন প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমি থেকে ধানে কৃষকের আয় হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।
শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের চর-নরিনা গ্রামের শাহীনূর রহমানসহ বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক জানান, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও চলতি বোরো মৌসুমে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেওয়ায় বোরো ধানের ফলনও খুব ভালো হয়েছে। লকডাউনে কৃষকদের হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা নিজেরাও উৎসবের আমেজে ধান কাটছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবু হানিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্যোগমুক্ত আবহাওয়ার কারণে এবার ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফলন অতীতের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এভাবে থাকলে ধানের বাম্পার ফলন নিয়ে কৃষকেরা যে স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের সেই স্বপ্ন এবার পূরণ হবে।
তবে প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জেলার ধানের জন্য বিখ্যাত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম তাড়াশ উপজেলা। কিন্তু সেখানে ফসলি জমিতে যত্রতত্র পুকুর খননে যেমন জমি কমেছে, তেমনি এর কারণে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতায় কমে গেছে ধানের চাষ।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকিতে কৃষকদের মাঝে সার, বীজ দেওয়াসহ প্রণোদনা থেকে শুরু করে নানা সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বদা জমি পরিদর্শন করে সঠিক পরামর্শ ও ফসলে যেন কোনো পোকার আক্রমণ না হয়, সে বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।
এনএ