গাজীপুরের কাপাসিয়া বাজারে করোনা মহামারির মধ্যে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে যাওয়ায় ১২ জন মা-বাবাকে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (৫ মে) বিকেলে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ও জরিমানা করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা জানান, বিকেলে কাপাসিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় করোনা মহামারির মধ্যেই অনেক বাবা-মা তাদের দুধের বাচ্চা ছাড়াও কম বয়সী শিশুদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। শিশুদের মুখে মাস্কও ব্যবহার করা হয়নি।

পরে তাদের ১২ জনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১২ জনের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, যেখানে সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শিশুদের নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন তাদের বাবা-মা-অভিভাবকরা। তাদের সতর্ক করতেই আজ জরিমানা করা হয়েছে। 

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ আরেক দফা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বুধবার (৫ মে) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ ৫ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমান করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় নতুন কিছু শর্তে ৫ মে মধ্যরাত থেকে ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হলো।

নতুন সংযুক্ত শর্তগুলো হচ্ছে-

১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে স্ব স্ব কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করবেন।

২. দোকানপাট ও শপিংমলগুলো পূর্বের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট ও শপিংমল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

৩. আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে আগামী ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।

৪. মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।

৬. কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাগুলোতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এক মাস পেরিয়েছে চলমান বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম দফায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। পরে সেটি ২ দিন বাড়ানো হয়। এ দফায় ভালো ফল না আসায় ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এটি বাড়িয়ে পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। যদিও এ দফায় শপিং মল খোলাসহ বেশকিছু বিষয়ে বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করে সরকার। সবশেষ ২৮ এপ্রিল বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আজ (৫ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো- বর্ধিত বিধিনিষেধ চলবে ১৬ মে পর্যন্ত।

করোনার সবশেষ পরিস্থিতি

৫ মে পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ১১ হাজার ৭৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৮ জন। সবশেষ বুধবার করোনায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে, ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৬৪৮ জন। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ লাখ ৪১ হাজার ২৪ জনে। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৭ লাখ ৭৬ হাজারে। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৫০ লাখ। 

শিহাব খান/আরএআর