সরকারি অফিসে ধুমধামে বিয়ের আয়োজন
পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়
তিন দিন ধরে আলোকসজ্জা। সন্ধ্যা হলেই আলোর ঝলকানি। দূর থেকে দেখে মনে হবে কমিউনিটি সেন্টার। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই ভুল ভেঙে গেল। চোখে পড়লো উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড। প্রতি বছর জাতীয় কোনো দিবসে বা বিশেষ দিনকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় এ কার্যালয়টি। কিন্তু এবার সেজেছে ভিন্ন কারণে। তা হলো বিয়ের আয়োজন। রোববার (০৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, অফিসের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যালয়ের দরজা জানালা খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল দাপ্তরিক কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সেবাগ্রহীতাদের।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৪ জানুয়ারি) উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে অফিস সহকারী শাহ্ আলমের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে এতো আয়োজন। অফিসের ভেতরে বাহিরে আলোকসজ্জা, তোরণ আর সামিয়ানা মোড়ানো সাজসাজ পরিবেশ দেখে হতবাক স্থানীয়রা। সরকারি অফিসে বিয়ের আয়োজন নিয়ে অনেকের মাঝেই মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় এক মুদি দোকানি জানান, রোববার পশুপাখির চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই চলে গেছেন।
বিজ্ঞাপন
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন জানান, গত কয়েকদিন ধরে অফিসের দাপ্তরিক ও চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে অফিস সহকারীর ছেলের বিয়ের আয়োজন চলছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় ঠিক মতো অফিসে আসেন না। নিয়মবহির্ভূতভাবে অফিসের দ্বিতীয় তলায় নিজের থাকার বন্দোবস্ত করেছেন অফিস সহকারী শাহ্ আলম। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। এজন্য অফিসের ভেতরে বিয়ের আয়োজন করেছেন। রাতদিন একাধারে গান-বাজনা চালিয়েছেন। সরকারি অফিসে এমন বিয়ের অনুষ্ঠান আগে কখনও হয়নি।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহার উদ্দিন বলেন, আমাদের অনেকের বসবাস আবাসিক এলাকায়। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ও এখানে। কিন্তু কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রেখে যেভাবে ধুমধাম করে বিয়ের জন্য দিনরাত গান-বাজনা চলছে, তা দুঃখজনক। কয়েকদিন ধরে এলাকার মানুষ ঠিক মতো ঘুমাতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে অফিস সহকারী শাহ্ আলম বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠানের ঘরোয়া আয়োজন করেছি। করোনার কারণে সীমিত পরিসরে এ অনুষ্ঠান হবে। স্যারকে দাওয়াত করেছি।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামছুল আরেফীন বলেন, উচ্চস্বরে গানের শব্দ আমিও পেয়েছি। বিষয়টি দেখার জন্য আমি লোক পাঠিয়েছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শামছুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহ্ জালাল খন্দকার জানান, সরকারি অফিসে এ ধরনের অনুষ্ঠান বিধিসম্মত না। এমন আয়োজন করাও ঠিক না। তবে অনুমতির বিষয়ে কথা বললে তিনি তা এড়িয়ে যান।
আরএআর