কক্সবাজারের রামুর রাংকুট মহা বৌদ্ধবিহার

দেশের পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে কক্সবাজারের রামুর রাংকুট মহা বৌদ্ধবিহার। আড়াই হাজার বছরের পুরোনো বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার হিসেবে পরিচিত এই বিহার। আধুনিক নকশা ও শৈলীতে ইট-পাথরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধবিহারগুলোর মধ্যে সম্রাট অশোক নির্মিত ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধবিহার অন্যতম।

রামুর রাজারকুল ইউনিয়নে মহাবিহারটির অবস্থান বলতে গেলে রাস্তার পাশেই। এর মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখ জুড়ে যায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উপাসনারত বুদ্ধের মূর্তি দেখে। ফটকের ডান পাশে রয়েছে উপাসনারত ৩৫টি বুদ্ধমূর্তি। আর হাতের বাঁ পাশে রয়েছে ৫০টি।

একটু সামনেই রয়েছে রাংকুট (রাং-উ) বনাশ্রম মহাতীর্থ মহাবিহারের সাবেক অধ্যক্ষ জগৎচন্দ্র প্রজ্ঞাজ্যোতি চন্দ্রজ্যোতি স্মৃতিমন্দির।

প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর আগে সপ্তম শতাব্দীতে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাংয়ের ভারত ও বাংলাদেশে বুদ্ধের অবস্থানস্থল আবিষ্কারের সময়ে রোপিত তৃতীয় বটবৃক্ষটি রয়েছে মূল আশ্রমের পাশেই। এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে রয়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ত্রিপিটক হাতে সম্রাট অশোক মহারাজার ২৩ ফুট উঁচু ভাস্কর্য।

মূল মন্দিরে বুদ্ধের মূর্তি দর্শন করতে হলে আপনাকে ৬৭টি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। ওপরে উঠেই দেখা যায়, ছোট-বড় পাশাপাশি চারটি বৌদ্ধমূর্তি। যার একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের (বুড়া গোঁয়াই) মূর্তি। তা ছাড়া রয়েছে তৎকালীন আরাকান রাজা কর্তৃক স্থাপিত শ্বেতপাথরের বুদ্ধের মূর্তি।

ঢাকা থেকে আসা সুবির বড়ুয়া বলেন, এটি অনেক পুরনো ঐতিহাসিক বিহার। অনেকে আসে পুণ্য করতে আবার অনেকে আসে ইতিহাসের এই বিহারের নিদর্শনগুলো দেখতে। ইচ্ছে করছে এখানে থেকে যেতে।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে আসা রাতুল হোসেনের মতে, বিহারটিতে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। বিশেষ করে ইতিহাস বা পুরোনো নিদর্শনগুলো কেমন ছিল। এসব বিষয়ে জানার অনেক সুযোগ রয়েছে।

বিহারটিতে ৮ জন অধ্যক্ষ ও ৩৪ জন শিষ্য রয়েছে। বিহারের সিনিয়র 'শাসন বংশ ভিক্ষু' ঢাকাপোস্টকে বলেন, প্রায় আড়াই হাজার বছরের এ স্থাপনায় হাজারো পর্যটক বা সেবাগ্রহীতারা আসে। এই বিহার দেশের পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনা হতে পারে। তাই বিহারটিকে নতুন করে সাজিয়ে দেয়ার দাবি তার।

শিলালিপি ও বৌদ্ধ ইতিহাস মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মহামতি বুদ্ধ সেবক আনন্দকে নিয়ে বার্মা যাওয়ার পথে এই পর্বতে উপবেশন  করেন। এ সময় নহামতি বুদ্ধ তিন পিঠকে ৮৪ হাজার বাণী বা ধর্মস্কন্ধ সম্পর্কে আলোকপাত করে  বলেন, মহপরিনির্বাণের পর এই ধরাধামে এমন একজন মহাপুরুষ জন্ম নেবেন, যিনি বুদ্ধের প্রচারিত ৮৪ হাজার ধর্মবাণীকে সারা বিশ্বে প্রচারের জন্য ৮৪ হাজারটি ধাতু চৈত্য নির্মাণ করবেন। সেই ৮৪ হাজার ধাতুচৈত্যের একটি চৈত্য এই পশ্চিম সমুদ্রের পূর্বতীরে রম্যবতী বা রম্মাওয়াদী নগরের পর্বত শীর্ষে স্থাপিত হবে। সেই চৈত্যে আমার বক্ষাস্থি প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন এলাকটির নাম হবে ‘রাংকুট’। এই বলে বুদ্ধ বার্মায় চলে গিয়েছিলেন।

বুদ্ধের পরিনির্বাণের ২৩৯ বছর পর পৃথিবীতে সম্রাট অশোক জন্ম নিলেন। সম্রাট অশোক ৯৬ কোটি স্বর্ণামুদ্রা ব্যয় করে ৮৪ হাজারটি ধাতু চৈত্য প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে রাংকুট একটি, যা খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৮ অব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরাকান রাজা চন্দ্রজ্যোতি বুদ্ধ বক্ষাস্থির প্রতি সম্মান ও গৌরব প্রদর্শনার্থে রাংকুটের পূর্বে ’রাং-উ’শব্দটি যোগ করেন। এই ’রাং-উ’ শব্দটি পরে ভাষান্তর হয়ে ‘রামু’তে রূপান্তরিত হয়েছে বলে ঐতিহাসিকদের অভিমত।

এনএ