নতুন ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ
পদ্মা সেতুর ৪১ স্প্যানের মধ্যে বাকি আছে মাত্র একটি বসানোর কাজ
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো এখন পুরোপুরি দৃশ্যমানের পথে। একই সঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বাকি আছে মাত্র একটি বসানোর কাজ।
সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড় মাওয়া ও জাজিরা যুক্ত হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক হলেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দেখা যাবে।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অনুকূল ও কারিগরি জটিলতা দেখা না দিলে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুতে বসতে পারে সর্বশেষ অর্থাৎ ৪১তম স্প্যান ২-এফ।
৪০তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া অংশে মাঝ নদীতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারে ৪১তম স্প্যান বাসানো হবে। এতে দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো।
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে স্প্যানটি ভাসমান ক্রেনে নির্ধারিত পিয়ারের কাছে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ৪১তম স্প্যানটি পিয়ারে বসানোর জন্য প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি বহন করে ভাসমান ক্রেন তিয়াইন-ই নির্ধারিত পিয়ারের কাছে নিয়ে নোঙর করবে। কারিগরি অন্যান্য কাজ সেরে স্প্যানটি শুধু উপরে তোলার কাজ বাকি থাকবে। বৃহস্পতিবার সকালে পিয়ারের ওপর তোলা হবে স্প্যানটি।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে সর্বশেষ স্প্যান খুঁটিতে বসানোর কাজটা কিছুটা কঠিন হতে পারে। এজন্য আগেই খুঁটির কাছে নিয়ে রাখা হবে। যাতে আগামীকাল সহজেই স্প্যানটি তোলা যায়।
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অর্থাৎ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। মাওয়ার কুমারভোগের নির্মাণমাঠে যেখানে স্প্যান প্রস্তুত করা হয়, সেখান থেকে এটি বসানোর খুঁটি খুব বেশি দূরে নয়।
এদিকে স্প্যান বসানো ছাড়াও অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে সেতুতে ১৮ শতাধিক রেলওয়ে ও ১২ শতাধিক রোড ওয়েস্ল্যাব বসানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
মূল সেতুর কাজের চুক্তি মূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৭ ভাগ শেষ হয়েছে। নদীশাসন কাজের চুক্তি মূল্য আট হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা।
অনেক আগেই সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার খাত, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ খাত, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট ও আয়কর, যানবাহন, বেতন ও ভাতাদি এবং অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ সাত হাজার ৭১৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক দুই কোটি টাকা, অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৪০টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ছয় হাজার মিটার।
৪২ পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সবকটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু।
এএম