নড়াইল পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে চলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। শনিবার (১২ জুন) থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউন চলবে আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত। লকডাউনের প্রথম দিন কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিধিনিষেধ প্রতিপালনে পরিচালনা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে মাঠে নেমে কাজ করা হচ্ছে। আমি নিজেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। এছাড়া বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও রাস্তাঘাটে চলাচল করা মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিল। করোনা সংক্রমণ সতর্কতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শনিবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিন কঠোর নজরদারী জারি করে প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শনিবার বিকেলে চলাচলকারী ইজিবাইক ও পথচারীদের মাস্ক ব্যবহারে সচেতন করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টার আগে দোকান-পাট বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়।  

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,  লকডাউনের প্রথম দিন শনিবার ১০টি টিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৩৯ মামলায় ৩৯ জনকে ২৪ হাজার ৬০ টাকা জরিমানা করেছে। 

শুক্রবার (১১ জুন) রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। গণ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নড়াইলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ১২ জুন থেকে নড়াইল পৌরসভা, নড়াইল সদরের কলোড়া ইউনিয়ন, সিংঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন, লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়ন ও লোহাগড়া বাজার এলাকায় আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন চলমান থাকবে। 

এই সময়ে লকডাউন ঘোষণাকৃত এলাকায় বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ভেতর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা লকডাউন মুক্ত থাকবে। এর আগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

পরে শনিবার আরেকটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা প্রশাসক। ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নড়াইল জেলায় করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় পৌরসভাধীন ভাদুলীডাঙ্গা, আলাদাতপুর ও মহিষখোলা, সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের সমগ্র গোবরা বাজার এবং লোহাগড়া উপজেলাধীন লোহাগড়া বাজার এলাকা ১২ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হলো। লকডাউনকালীন ঘোষণা করা এলাকায় বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ভেতর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না।

এছাড়া লকডাউনকালীন জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসা সেবা, কৃষিপণ্য, খাদ্য সরবরাহ ও সংগ্রহ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ওষুধ শিল্পসংশ্লিষ্ট যানবাহন, কর্মী ইত্যাদি এবং সরকার ঘোষিত অন্যান্য জরুরি পরিষেবা এর আওতা বহির্ভূত থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, নড়াইলে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৮ জন। মারা গেছেন ২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৭ জন। 

মোহাম্মদ মিলন/ওএফ